দার্শনিক আল ফারাবি ৯৫০ খিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। তখন হিজরি ৩৩৮ সাল।
এক সময় মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা কোনো অংশে কম ছিল না। সে সময় সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও সভ্যতায় মুসলিম জাতি ছিল উন্নত ও শ্রেষ্ঠ। কিন্তু নাক উচুঁ স্বভাবের ইউরোপের পণ্ডিতরা বিশ্বখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নাম সেভাবে উপস্থাপন করেননি। তার পরও বিজ্ঞানী আল ফারাবির নাম উল্লেখযোগ্য।
আল ফারাবি দর্শন ছাড়াও যুক্তিবিদ্যা ও সংগীতের ন্যায় জ্ঞানের বিস্তর শাখায় অবদান রাখেন। তিনি একজন খ্যাতনামা দার্শনিক ও বহুভাষাবিদ পণ্ডিত। তিনি প্রায় সত্তরটি ভাষা জানতেন। আর যে কারণে আরবরা তাকে বলতো, ‘হাকিম সিনা’ অর্থাৎ দ্বিতীয় আচার্য। তার পুরো নাম আবু নসর আল ফারাবি। জন্ম আনুমানিক ধরা হয় ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু হয় ৯৫০ খ্রিস্টাব্দে।
অাল ফারাবি বাস করতেন তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ফারাব নামক শহরের নিকটে আল ওয়াসিজ গ্রামে। তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন ফারাবায়। কয়েক বছর পর আরো শিক্ষার উদ্দেশে চলে যান বোখারার। পরে আল ফারাবি উচ্চ শিক্ষার জন্য গমন করেন বাগদাদে। তিনি সেখানে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অধ্যায়ন ও গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিলেন পারদর্শী। তবে দার্শনিক বিজ্ঞানী হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
দেশ-বিদেশের আরো অনেক স্থানে পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক হিসেবে আরহণ করেছিলেন জ্ঞানের শীর্ষে।
পদার্থ বিজ্ঞানে তিনিই ‘শূন্যতার’ অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। প্লেটো ও এরিস্টটল এর দর্শনের ওপর তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। তিনি স্রষ্টার সর্বাধিপত্য স্বীকারের পাশাপাশি সৃষ্টিকেও শাশ্বত বলে মনে করতেন। তিনি কোনো চরম মত পোষণ করতেন না এবং চিন্তার ক্ষেত্রে পরস্পর-বিরোধী মতকে প্রায়শই একসঙ্গে মিলানোর চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পুরোপুরি সফল।
মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে আল ফারাবির প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
এমএ/