‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়ায্যিনের আযান শুনতে পাই...। ’ এভাবেই মসজিদের পাশে সমাহিত হওয়ার আকুলতা প্রকাশ করেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
মসজিদের মিনার ফুঁড়ে দিনে ৫ বার আমরা শুনি হৃদয়কাড়া আজানের মধুর ধ্বনি। যে ধ্বনি মানুষকে আল্লাহর পথে আসার আহবান জানায়, নিজেকে সমর্পিত হতে শেখায়। তাই তো দেখি মুমিন বান্দারা আজানের ধ্বনি শুনে মসজিদ পানে ছুটে যায়। যেনো মসজিদ তার প্রাণের স্পন্দন। বস্তুত প্রত্যেক মুসলমানেরই এমন অনুভূতি থাকা আবশ্যক।
মসজিদ শব্দটি আরবি। এর অভিধানিক অর্থ, শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থাৎ সিজদা করা। সাধারণভাবে যেসব ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, তাকেই মসজিদ বলা হয়।
জামে মসজিদ
যেসব বড় আকারের মসজিদগুলো নিয়মিত নামাজের সঙ্গে সঙ্গে শুক্রবারের জুমার নামাজ আদায় করা হয় এবং অন্যান্য ইসলামিক কার্যাবলী যেমন, মানুষকে কোরআন শিক্ষা দেওয়া, দ্বীনের কাজ তথা মানুষকে নামাজের দাওয়াত দেওয়া, ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে অালোচনাসহ নানাবিধ সামাজিক কাজ সম্পাদিত হয়- সেগুলো জামে মসজিদ নামে অভিহিত।
মসজিদ আবাদকারীরা সৎপথপ্রাপ্ত
মসজিদ আবাদ অর্থ হলো, মসজিদকে ইবাদত-বন্দেগির পরিবেশে গড়ে তোলা। যারা এসব কাজ করবেন, তারা সৎপথপ্রাপ্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে, যারা ঈমান আনে, আল্লাহ ও আখেরাতে এবং নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত। ’ -সূরা আত তওবা: ১৮
নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায়কারীরা আল্লাহর প্রতিবেশী
নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিবেশী বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ উচ্চস্বরে আহ্বান করতে থাকবেন, আমার প্রতিবেশী কোথায়! আমার প্রতিবেশী কোথায়! ফেরেশতাগণ তখন নিবেদন জানাবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! কার পক্ষে আপনার প্রতিবেশী হওয়া সম্ভব? তিনি তখন বলবেন, মসজিদসমূহ আবাদকারিরা কোথায়?’
উল্লেখিত হাদিসটি ইবনুন নাজ্জার হজরত আনাস (রা.) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর নিকট পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ
মহান আল্লাহতায়ালার নিকট পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান হলো পবিত্র মসজিদ। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হচ্ছে মসজিদসমূহ। আর তার নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় স্থান হচ্ছে বাজারসমূহ। ’ –সহিহ মুসলিম
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক...
হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন। -ইবনে মাজাহ
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক।
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। -তিরমিজি
আসলে মুসলিম আর মসজিদ- যেন একই সুতোয় গাঁথা মালা। তাই তো মহান আল্লাহতায়ালা কাছে আত্মসমর্পিত একজন মুসলিম ব্যাকুল হৃদয়ে প্রতিদিন ছুটে চলেন মসজিদ পানে। মিনারে ভেসে আসা সুরের টানে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমেই তিনি অনুভব করেন পরম প্রিয় মহামহিম সত্তাকে। এটা অনুভবের বিষয়, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধির বিষয়। যে অনুভব প্রত্যেক মুসলমানের থাকা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
এমএ/