ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইজতেমার ময়দানে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৫
ইজতেমার ময়দানে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মুসলমানদের মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে টঙ্গীর তুরাগ তীরে চলেছে ময়দান প্রস্তুতের কাজ। ময়দানের আশ-পাশের এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে কাজ করতে আসছে স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা।



২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে, প্রথম পর্ব শুরু হবে ৮ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ১০ জানুয়ারি। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে অনেকটা জোরেশোরেই চলছে ময়দান প্রস্তুতির কাজ।

টঙ্গির তুরাগ তীরে ১৬০ একর জায়গার ওপর চট ও বাঁশ দিয়ে ছাউনি তৈরির কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী, শ্রমিক, চাকরীজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠের সংস্কার কাজ করতে দেখা গেছে।

মুসল্লিদের থাকার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ছাউনি। এর জন্য পুরো মাঠেই বাঁশের খুঁটি স্থাপন করা শেষ। মাঠের পশ্চিম পাশে মাটি সমানের কাজ করছে মুসল্লিরা।

বিদেশি মেহমানদের থাকার জন্য লোহার খুঁটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আলাদা কামরা। ময়দানে মূল বয়ানের মঞ্চ তৈরির কাজও চলতে দেখা গেছে।

ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের চারপাশে কাঁচা-পাকা টয়লেটের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ময়দানের চার পাশেই রয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ দুই তলা-তিনতলা টয়লেট। তবে মুসল্লিদের সুবিধার্থে এর পাশেও কাঁচা-পাকা আরো টয়লেট স্থাপনের কাজ চলছে।

শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) টঙ্গির তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে একসঙ্গে ৫০ জন বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত ময়দান সংস্কারের কাজ করেন তারা। এই দলের মধ্যে থাকা মো. রাহিন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই এখানে কাজ করতে আসি। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের থাকার সুবিধার্থে ছাউনি তৈরির কাজ করেছি।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে আশা করছি শুরুর আগেই শেষ হবে।

এদিকে, পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজার থেকে শুক্রবার সকালে ইজতেমার ময়দানে ৪১ জনের একটি দল এসেছেন স্বেচ্ছায় কাজ করতে। ময়দানের পশ্চিম পাশে মাটি সমান করার কাজ করছেন তারা। তিন দিন কাজ করবে বলে জানান।

মো. সেলিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবারও ময়দানে কাজ করতে আসতে পেরেছি। আমরা এখানে তিনদিন কাজ করবো। প্রতিবারই আমরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে আসি। ভালো লাগে, মনে শান্তি লাগে এখানে কাজ করলে। ’ 

এর আগে ১৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিশ্ব ইজতেমার প্রস্ততি ও নিরাপত্তা বিষয়ে বলেছিলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মাঠের সব প্রবেশ পথে ও কৌশলগত স্থানে ইলেক্ট্রনিক তল্লাশি (আর্চওয়ে) ব্যবস্থা, ভিডিও ক্যামেরা স্থাপনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদক্ষেপ।

ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় কন্ট্রোল রুম এবং আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। নিরাপত্তায় পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিমও থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি ঠিকঠাক আছে কী না তা নিয়ে আমরা আবার ফলোআপ মিটিং করবো।

ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আগত মুসল্লিদের সেবার জন্য ওয়াসা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া ইজতেমা উপলক্ষ্যে তুরাগ নদীর পারে ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইজতেমা এলাকায় অস্থায়ী দোকানপাট,স্থাপনা,বস্তি এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইজতেমাস্থল ও আশেপাশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রি মনিটর, খাবারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ও পঁচা-বাসি খাবার বিক্রির বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ইজতেমা চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অশ্লীল পোস্টার, অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন এবং আপত্তিকর ব্যানার অপসারণ করা হবে।

ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি সম্পর্কে গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আশ-পাশের এলাকা ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছে। ইজতেমা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পর্কে গত ১৯ নভেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ওই বৈঠকে সবাইকে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিলো। যেমন মুসল্লিদের জন্য ময়দানে পানির সুবিধা, বিদ্যুতের সুবিধা, নিরাপত্তা এবং বিদেশি মেহমানদের থাকা ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো।  

আগামী ২০ ডিসেম্বর এই সংক্রান্ত আরো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কাজের অগ্রগতি সস্পর্কে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
এসজেএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।