মানবজীবনের কিছু স্থায়ী ও মৌলিক বিষয় অপরিহার্য। এ বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদদের অভিমত হলো, জীবনের সত্য বুঝতে পারা, সত্যের উৎসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ওই আলোয় নিজেকে আলোকিত করা, জীবনের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা, জীবনের সময়কে অর্থপূর্ণভাবে কাজে লাগানো- ইত্যাদি বিষয়গুলোর ওপর মানুষের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ণয় করে।
সে হিসেবে বলা যায়, ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবনের উপকরণসমূহ লাভ করা, আল্লাহ্তায়ালা কর্তৃক নিয়ামত ভোগ ও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) দেখানো পথেই রয়েছে তাবৎ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও মর্যাদা। ইসলামের এ নির্দেশনা অনুসরণ করলেই কেবল জীবনে গতিশীলতা আসবে।
ব্যাপক আলোচনার মাঝে আমরা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি, মানুষের ব্যক্তিজীবনের বিষয়টি। ব্যক্তিজীবনে মানুষ সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালা ও নবী মুহাম্মদের (সা.) নির্দেশিত পথ অনুযায়ী চললে তাদের সমস্ত উদ্যোগ ও চিন্তাশীলতা সঠিক পথে থাকবে।
বস্তুত সুষ্ঠু বিবেক ও মেধাশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন, মিথ্যা ও অনাচারের বিরুদ্ধাচারণ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা কিংবা এর বিপরীতে উদাসীনতা, ভ্রান্ত মত-পথ-ব্যক্তি-গোষ্ঠী বা ব্যবস্থার অনুসরণ স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন পথের। যে পথে নেই কোনো সফলতা। পবিত্র কোরআনের সূরা ফাতেহায় ওই পথকে বলা হয়েছে, অভিশপ্তদের পথ।
অতএব বোঝা যায়, আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত নিয়মেই রয়েছে মানুষের সৌভাগ্যের কারণ ও তা লাভের নিয়ম। যদিও এর পদ্ধতি এবং স্তর রয়েছে। তার পরও বলা যায়, ব্যক্তি জীবনে যথাযথ দায়িত্ব জ্ঞান ও সমাজ জীবনে সুবিচারের মাধ্যমে শান্তি ও সাফল্যের দ্বার উন্মোচিত হয়।
অনেকে আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত নিয়মনীতি উপলদ্ধি করতে না পেরে এ সব বিষয়ে অবাস্তব ও বিকৃত ধারণা পোষণ করে থাকেন। ক্ষেত্রে বিশেষ কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করতেও দ্বিধা করেন না। যেমন, অন্যায়ভাবে জুলুম করে, অন্যের অধিকার লুণ্ঠন করে, ধোঁকা দিয়ে মানুষকে ঠকায়, প্রতারণা করে, অবৈধভাবে সম্পদ কুক্ষিগত করে। গুটি কয়েক লোকের পাশবিকতায় অনেক লোক বঞ্চিত হয়। বঞ্চিতরা এগুলোকে ভাগ্যের লিখন বলে চালিয়ে দিতে যায়। কিন্তু ইসলাম এ মানসিকতাকে সমর্থন করে না। এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কেউ অন্যায় করছে। ইসলাম ওই অন্যায়কারীকে রুখতে বলে, তাকে অন্যায় থেকে হাত গুটিয়ে চলতে বলে। আল্লাহর এ আহবান যে মানবে, সেই হবে সফল ও সৌভাগ্যের অধিকারী। আর না মানলে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির ঘোষণা।
মানুষ যাতে জীবনের এই মর্ম ও সত্যসমূহ উপলদ্ধি করে যাবতীয় মিথ্যা, আঁধার ও কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে সৎ গুণাবলী বিকশিত করে সঠিক লক্ষ্যে চলতে পারে, আদর্শ ও সভ্য সমাজ গঠন করে অধিকার ও মর্যাদা সহকারে বাঁচতে ও বিকশিত হতে পারে এবং শোষণ-নিপীড়ন-পাশবিকতা-কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকতে পারে সে জন্য- মানুষকে সুস্থ ও সঠিক জীবন ব্যবস্থার পথ দেখিয়েছেন। মেধা, শক্তি ও আল্লাহ প্রদত্ত উপকরণ ব্যবহার করে, জীবনকে সুন্দর ও সচ্ছন্দ করার জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনাতেই রয়েছে মানব জীবনের সফলতার মূল উপকরণ। অন্যভাবে বলা যায়, মানুষের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
এমএ/