ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলানিউজকে মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী

শ্রেষ্ঠ নবীর অনুসারী বলেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবিদার

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
শ্রেষ্ঠ নবীর অনুসারী বলেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবিদার

মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী চট্টগ্রামের একজন সুপরিচিত আলেম। ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া মাওলানা হাসনাবাদী ১৯৯৫ সনে জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন।

পরে তিনি হাদিসের ওপর উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণ করেন। লেখালেখিতে তিনি বেশ সরব। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২০টির অধিক।

মাওলানা হাসনাবাদী বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন এলাকার দারুল আফকার আল ইসলামিয়ার পরিচালক। সেই সঙ্গে ফটিকছড়ি থানা কেন্দ্রীয় গায়েবি মসজিদের খতিব ও মাসিক আল মানাহিলের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি রবিউল আউয়াল মাসে নবী জীবনের নানাদিক নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। আলাপাচারিতায় ছিলেন- কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক

বাংলানিউজ: আলেমরা প্রায়ই বলে থাকেন, আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত। এর কারণ কী? এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে আমাদের কী করতে হবে?
মাওলানা হাসনাবাদী: নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠত্ব কত মহান তা আর নতুন করে বলা ও ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। তিনি সব যুগের শ্রেষ্ঠ মানব, যার তুলনা  তিনিই। তিনি সব নবীদের নবী, সব রাসূলদের রাসূল। তার আদর্শ পৃথিবীর সব আদর্শ ও আখলাকের চেয়ে উত্তম ও সুন্দর। তার আখলাক যে কেউ অনুসরণ করে চললে সে দামি হয়ে যাবে। আমরা তার আদর্শের অনুসারী বলেই শ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবিদার।

তবে এই শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ মিলবে তখন, যখন আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে প্রিয় নবীর আদর্শকে অনুসরণ করব। জীবনের সব কিছুর চেয়ে নবীর সুন্নত পালনে বেশি মনোযোগী হব। কারণ সুন্নতের আমল ছাড়া প্রিয় নবীর মহব্বত ও শাফায়াত লাভ করা যাবে না। এমনকি আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করা সম্ভব হবে না। বায়হাকি ও মেশকাত শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিগড়িয়ে যাওয়ার কালে আমার সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য ১০০ শহীদের সওয়াব রয়েছে। ’

আমাদের বাসাবাড়িতে বিভিন্ন বিজ্ঞানী, দার্শনিক বা মনীষীদের জীবনী কম-বেশি আছে। অথচ মুসলমান হিসেবে, উম্মত হিসেবে নবীর জীবনী অনেকের কাছেই নেই। এটা অতীব দুঃখের বিষয়। তাই আমি নবী-প্রেমিকদের কাছে অনুরোধ করব, আসুন! আমরা অন্তত প্রিয় নবীর একটি জীবনীগ্রন্থ পাঠ করি এবং নিজ পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের পাঠ করতে উৎসাহিত করি। যত বেশি প্রিয় নবীর জীবনী পড়ব তত বেশি আল্লাহর রহমত আমরা পাব এবং আমাদের গুনাহগুলো মাফ হবে। জীবন হবে আলোকিত। সমাজ ও দেশের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে সন্দেহাতীতভাবে, ইনশাআল্লাহ।  

বাংলানিউজ: মিলাদুন্নবীর মূল শিক্ষা কী?
মাওলানা হাসনাবাদী: এ বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কাব্যগ্রন্থ, পুঁথি-পুস্তক, গল্প-উপন্যাস, কল্পকাহিনী, ছড়া-ছন্দ, পদ্য, গান লেখা হয়েছে; লেখা হচ্ছে ভবিষ্যতে আরও লেখা হবে। মিলাদুন্নবীর মূল তাৎপর্য, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে আরও হবে। তবুও এটা নিশ্চিত যে, সব ব্যাখ্যার সার ব্যাখ্যা, সব কথার সার কথা যাতে সবাই একমত, তা হচ্ছে, মিলাদুন্নবীর মূল শিক্ষা হলো- একমাত্র কালেমা তাইয়্যেবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ ভিন্ন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) তার প্রেরিত রাসূল। ’ এ কালেমার গূঢ়ার্থ হাজারও প্রকারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও অতি নিখুঁত বিশ্লেষণ হলো- ঈমানে মুজমাল। যেখানে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব প্রভু আল্লাহর প্রতি আমি ঈমান আনলাম, তার সব আদেশাবলি মেনে নিলাম। ’

মোটকথা, মিলাদুন্নবীর আসল শিক্ষা হলো- মহানবীর ২৩ বছরের কঠোর সাধনার ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করা। আর এটাই নবী বা রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য; যা পবিত্র কোরআনে বারবার বিবৃত হয়েছে।

বাংলানিউজ: সমাজ সংসারে অন্য ধর্মের তুলনায় আমাদের ধর্মে নবী আদর্শের প্রভাব কতটুক?
মাওলানা হাসনাবাদী: অন্য ধর্মের মুনি-ঋষি, সাধক, ধর্মপ্রচারক এমনকি অন্য নবী-রাসূলদের জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক জীবন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। তাদের অনেকেই ছিলেন সমাজবিরাগী। অনেকের মূল দর্শন ছিল সমাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে একাকী নিভৃতে স্রষ্টার সাধনা করা। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.)-এর দর্শন ঠিক তার উল্টো। ‘ইসলামে কোনো বৈরাগ্য নেই। ’ তার ৬৩ বছরের জীবনে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে একজন সামাজিক মানুষ। প্রচলিত অর্থে আত্মীয়, পরিবার নিয়ে বসবাসকারী একজন সংসারী মানুষ। এ সমাজ সংসারেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে সত্য, ন্যায়নীতি, সুষম অধিকার, কর্তব্য, করণীয় এবং মানবিক আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত আদর্শ সমাজ। শুধু তাই নয়, তার দর্শনে সেই আদর্শ সমাজে আদর্শ জীবনযাপনই হচ্ছে ইবাদত, আদর্শ সমাজ অনুশীলনই ইসলাম। তার প্রদর্শিত ইসলাম তাই শুধু ধর্মমত নয়- ‘একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এমএ

** শ্রেষ্ঠ নবীর অনুসারী বলেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবিদার
** সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা নিয়ে কিছু কথা
** ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে

** সিরাত কাকে বলে?
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
**  ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।