ঢাকা: বর্তমান পৃথিবীতে চক্রান্তকারীরা ইসলামকে ভুলভাবে ব্যাখা করছে। জিহাদ আর জঙ্গীবাদকে এক করে ফেলা হচ্ছে।
শনিবার (০২ জানুয়ারি) সকালে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে বাংলানিউজের ইসলাম বিভাগের আয়োজনে ‘ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর মূল্যবোধ চর্চা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এখন ইসলামকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে মেলাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। এর সমালোচনা করে দক্ষিণবঙ্গ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমিন বলেন, মহানবী (সা.)-এর অনুসারীরা জঙ্গিবাদী করে মানুষকে কষ্ট দেবেন তা কোনো দিনও সম্ভব না।
তিনি বলেন, জিহাদ ও জঙ্গিবাদ ভিন্ন জিনিস। ইসলাম সেকেলে নয়, বরং আধুনিক ধর্ম।
মুফতি রুহুল আমিন আরও বলেন, মহানবী (সা.) প্রাণিকে আতঙ্কিত না করার নির্দেশ দিতেন, প্রাণির রক্ত দেখলে আতঙ্কিত হয় অন্য প্রাণি। সেই নবী জঙ্গিবাদের নির্দেশ দেবেন বা যারা তার অনুসারী তারা জঙ্গিবাদী হয়ে মানুষকে কষ্ট দেবেন, এটা কোনো দিনও সম্ভব না। জিহাদ ও জঙ্গিবাদ ভিন্ন জিনিস।
তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে সমকালীন সময়ের সব আধুনিক মাধ্যমের ব্যবহার হয়েছে, তার হাজারও নজির আছে।
বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়া জগতে হ্যাকিং মারাত্মক সমস্যা বলে মন্তব্য করেন মুফতি রুহুল আমিন।
তারপরও সব কিছু মিলিয়ে মিডিয়ার ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনলাইন মিডিয়ার ইসলাম পাতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ধরেন মাঝরাত, ২টা। একজন মানুষের মন নরম থাকে, অনলাইনে সার্চ করলে মহানবীর নাম চলে আসলো। হয়তো ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। হয়তো অবিশ্বাসের মনে বিশ্বাস জন্মাতে পারে। এ জন্য বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া মোহাম্মদপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও কলাম লেখক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন বলেন, ডিজিটাল মিডিয়ায় মহানবীর আদর্শ প্রচারে আলেম-ওলামাদের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। ৯০ শতাংশ মুসলমান থাকলে সে দেশে অর্থনীতির চাকা বিমানের চাকার মতো ঘুরবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মুফতি গোলাম রাব্বানী বলেন, মহানবীর আদর্শ প্রচারে ডিজিটাল মিডিয়া কিভাবে ব্যাবহার করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আর বসে থাকা চলবে না। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে, দৈনিক একটি করে হাদিস বা সুন্নত প্রচার করা যেতে পারে। অনলাইনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও লেখা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ইসলাম সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। আর জিহাদ সন্ত্রাস নয়, সন্ত্রাসবাদকে ধ্বংস করার জন্য জিহাদ এসেছে। আর এই জিহাদে নেই কোনো রক্ত, হত্যা বা সংঘর্ষ। কিন্তু মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়ার জন্য কিছু ইসলামবিরোধী মহল ইসলামের নামের অপব্যবহার করে পবিত্র নামটিকে মানুষের কাছে সন্ত্রাস হিসেবে তুলে ধরছে।
তাই ইসলাম সম্পর্কে মানুষদের সঠিক ধারণা দিতে ডিজিটাল মিডিয়ায় ইসলামের বিভিন্ন দিক ও নবী-সাহাবিদের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
ইসলামি পত্রিকা পরিষদের সভাপতি ও মাসিক আদর্শ নারী পত্রিকার সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেওয়ার জন্যে ফেসবুক-টুইটার ব্যাবহার করা যেতে পারে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের ইন্টারন্যাশনাল শরিয়া রিসার্চ একাডেমির (ইসরা) গবেষণা সহকারী মুফতি ইউসুফ সুলতান বলেন, যারা বিকৃত লেখে তাদের মূল টার্গেট মহানবীকে (সা.) বিকৃত করা। মহানবীকে (সা.) বিকৃত করলে কোরআনে কারিমকে বিকৃত করা হয়, ইসলামকে বিকৃত করা হয়। তাই তারা এ পথ বেছে নিয়েছে।
এখন দুনিয়ায় যত সমস্যা তার সমাধান মহানবী নিজেই দিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কথা হচ্ছে, অথচ মহানবীর চোখে সংখ্যালঘু বলে কেউ ছিল না। কোনো জাতি বা ধর্মের একজন লোক থাকলেও, সে অন্য সব জনগণের মতো সমান অধিকার পাবে।
এ কারণে আমাদের বেশি বেশি রাসূলের কথা প্রচার করতে হবে, তার আদর্শের অনুগামী হতে হবে। তার জীবনযাপন, মূল্যবোধ প্রচার করতে হবে। রাসূলকে প্রচার মানেই ইসলামের প্রচার।
রাসূলের বাণী, রাসূলের জীবন প্রচারের জন্য বাংলায় একটি ওয়েবসাইট তৈরি ও ফেসবুকে প্রচারণার গুরুত্বের কথা বলেন তিনি।
ঢাকার জামিয়া মাহমুদিয়া মেরাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল আলম ইসহাকি বলেন, মহানবী (সা.)-এর আদর্শ ও সৌন্দর্যকে ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। মহানবী যে মধুর ভাষায় কথা বলেছিলেন, সেগুলো প্রচারের অপার সুযোগ করে দিয়েছে ডিজিটাল মিডিয়া।
তিনি বলেন, দুনিয়াজুড়ে মানুষ মিডিয়াকে গ্রহণ করেছে, মহানবীর আদর্শ প্রচারের জন্য ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আলেম সমাজকে এগোতে হবে। বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে নবীর আদর্শ পৌঁছে দিতে হবে।
বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের সহকারী মুফতি শরিফুল আজম জানান, সর্বোচ্চ আখলাক ছিল মহানবীর মধ্যে। সাহাবাদের মধ্যেও রাসূলের গুণাবলী, চরিত্র প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ইসলাম প্রচারে প্রথমে ঠিক করতে হবে কোন দিকে, কোন পথে মানুষকে ডাকবে, রবের (আল্লাহ) দিকে ডাকতে হবে। উত্তম পন্থার মাধ্যমে ডাকতে হবে। এ জন্যে ডিজিটাল মিডিয়া ব্যাবহার করতে হবে। সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করেই আমাদের নবীর আদর্শ প্রচার করতে হবে।
সঠিকভাবে ইসলাম প্রচারে আলেম-ওলামাদের ডিজিটাল তথা অনলাইন মিডিয়া ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের সম্পাদক মওলানা মিরাজ রহমান।
তিনি বলেন, বিদায় হজের ভাষণের পর হাবিদের ঘোড়ার মুখ যেদিকে ছিলো তারা সেদিকেই ইসলাম প্রচারের জন্য ছুটে চলেছেন। এখন ঘোড়া দৌঁড়ানোর যুগ নেই, এখন ডিজিটাল মিডিয়ার যুগ। ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করতে হবে। সময়ের আবেদকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মওলানা মিরাজ বলেন, যদি এখনকার যুগ হতো তাহলে হয়তো নবী একদল সাহাবিকে প্রস্তুত করতেন- তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করায়। ইসলামের কাজে মিডিয়ার ব্যবহার এখন আর অস্পষ্ট নয়, এটা সুস্পষ্ট বিষয়।
বর্তমান মিডিয়া গুগল নির্ভর উল্লেখ করে মাওলানা মিরাজ রহমান বলেন, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা ইসলামি নাম ব্যবহার করে লিখে বিভ্রান্ত করার জন্য, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ফটোশপের মাধ্যমে কিছু ছবি ইসলামের কনটেন্ট বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
সে সব বিষয় থেকে সতর্ক থেকে সঠিকভাবে ইসলাম প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তিতে আলেমদের ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন মাওলানা মিরাজ।
তিনি বলেন, আলেম-ওলামাদের ডিজিটাল মিডিয়ায় আসতে হবে।
বাংলানিউজের ইসলাম বিভাগের প্রধান মুফতি এনায়েতুল্লাহর পরিচালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- রাহাবার মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাফেজ মুফতি সাইফুল ইসলাম, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির ধর্ম বিভাগের সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব, ইসলামি লেখক ও গবেষক মুফতি মাহফূযুল হক, টঙ্গীর জামিয়া নুরিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক, ডেমরা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা রাশিদুল হক।
বাংলানিউজের কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাজহার ও হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মুফতি ইউসুফ, নুরবিডি.কমের সম্পাদক সৈয়দ শামছুল হুদা, তরুণ আলেম ও লেখক মাওলানা আতাউর রহমান খসরু, হাফেজ মাওলানা হুজায়ফা আমিন ও তানজিল আমির।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৫
এমআইএইচ/এমএন/এমএ
** অনলাইন মিডিয়াই পারে ইসলাম-জঙ্গিবাদের পার্থক্য বোঝাতে
** জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে
** আনফিল্টার্ড তথ্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে
** মহানবীর অনুসারীদের জঙ্গি হয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া অসম্ভব
** চাচার হত্যাকারীকেও ক্ষমা করেছিলেন রাসূল
**মহানবীর চোখে কেউ সংখ্যালঘু নয়
** মহানবীর মধুর ভাষা প্রচারের অপার মাধ্যম ডিজিটাল মিডিয়া
** ‘মহানবী বসে পড়েছিলেন’
** আলেম-ওলামাদের ডিজিটাল মিডিয়ায় আসতে হবে
** বাংলানিউজের ইসলামি সেমিনার শুরু
** প্রিয় নবীর কিছু অনন্য গুণ
** ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর মূল্যবোধ চর্চা
** নবীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ুন, মনে শান্তি পাবেন
** সিরাতে ইবনে কাসির: সিরাত শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ
** সিরাতে ইবনে হিশাম: অনবদ্য এক সিরাত গ্রন্থ
** সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা নিয়ে কিছু কথা
** ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে
** সিরাত কাকে বলে?
** নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
** ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
** নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস