ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মহা নবী (সা.)-এর শিক্ষা

উপহার আদান-প্রদানে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
উপহার আদান-প্রদানে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়

উপহার আদান-প্রদান মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা গুণি তারা গুণমুগ্ধ ও ভক্তদের থেকে উপহার পেয়ে থাকেন।

যারা সমাজ জীবনে সামাজিকতা রক্ষা করে চলেন, তারা অন্যকে উপহার দিয়ে থাকেন। তাই কারও সামগ্রিক জীবন মূল্যায়ন করতে হলে; তার জীবনের উপহার দেওয়া-নেওয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার বা হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সাথী সাহাবিরা প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। শত্রুদের সাথে তার আদর্শিক শত্রুতা থাকলেও ব্যক্তি মুহাম্মদকে তারা ভালোবাসত ও ভালো জানতো। তাই শত্রু-মিত্র সবার কাছ থেকেই তিনি কমবেশি উপহার পেতেন। প্রিয় নবীকে দেওয়া উপহার তিনি গ্রহণ করলে উপহার প্রদানকারী আনন্দবোধ করতেন। তাই তিনি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ মানুষের দেওয়া বিভিন্ন উপহার সানন্দে গ্রহণ করতেন। উপহার গ্রহণ করে মানুষকে খুশি করতেন।

তবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র উপহার গ্রহণ করেই মানুষকে খুশি করতেন না বরং উপহার দিয়েও মানুষকে খুশি করতেন। যারা তাকে উপহার প্রদান করতো বিপরীতে তিনিও তাদের উপহার প্রদান করতেন। আবার উচ্চমূল্যের সৌখিন ও বিলাসী উপহার সামগ্রীগুলো সানন্দে গ্রহণ করে উপহারকারীকে খুশি করতেন ঠিকই কিন্তু নিজে সেগুলো ভোগ করতেন না। নিজের পরিবারস্থ পোষ্যদেরও ব্যবহার করতে দিতেন না। বরং এগুলো সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী ও আশপাশের মানুষকে দিয়ে দিতেন। যাতে করে প্রয়োজন পূরণ হয়।

সহিহ বোখারি শরিফের এক বর্ণনায় দেখা যায়, এক মহিলা অতি সুন্দর বাহারী একটি চাদর হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপহার দিলেন। তিনি তা গ্রহণ করলেন। আবার পরক্ষণেই এক ব্যক্তি ওই চাদরের প্রতি দুর্বলতা ও আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি খুশি মনে তাকে তা উপহার দিয়ে দিলেন।

‍একবার রোমের বাদশাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য রেশমের কাপড়ের মতো একটি জুব্বা (জামা) উপহার পাঠান। তিনি তা গ্রহণ করেন এবং উপহার গ্রহণের নিদর্শনস্বরূপ কিছু সময় গায়ে রাখেন। পরে হজরত জাফরকে ডেকে বলেন, তোমার ভাই হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশির কাছে আমার পক্ষ থেকে এ চাদর উপহার পাঠাও।

আবু দাউদের এক বর্ণনায় দেখা যায়, ইয়ামানের এক নৃপতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি শাল উপহার পাঠান। যা ক্রয় করা হয়েছিল বিশটি উট দিয়ে। পরবর্তীতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বাদশাহকে যে শাল উপহার পাঠিয়েছিলেন তার ক্রয়মূল্য ছিল বাইশটি উট।

মদিনার সাহাবিরা ভক্তি ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ প্রায় প্রতিদিনই রাসূলের ঘরে রান্না করা খাবার ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার পাঠাতেন।

তিনি যেদিন হজরত আয়েশার ঘরে থাকতেন, সেদিন উপহার তুলনামূলক কিছুটা বেশি হতো।

অন্যদিকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর থেকেও পাড়া প্রতিবেশিদের ঘরে প্রায়ই উপহার পৌঁছত। রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে অনেক কিছুই থাকতো তাতে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় হজরত আবু আইয়ুব আনসারী রাজিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উপহারস্বরূপ খাবার পাঠাতেন। তিনি ছিলেন রাসূলের মেজবান। রাসূল ছিলেন তার অতিথি। মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করে এসে তিনি উঠেছিলেন হজরত আবু আইয়ুব রাজিয়াল্লাহু আনহুর বাড়িতে। মসজিদে নববি ও তৎসংগলগ্ন হুজরাখানা (কামরা) নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি আবু আইয়ুব আনসারির ঘরেই অতিথিরূপে ছিলেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের খাদ্য সামগ্রীর উপহার সবচেয়ে বেশি পেতেন সুফফার লোকজন। মসজিদের বারান্দায় কিছু মানুষ সব সময় পড়ে থাকত। তারা বাইরে রুটি-রুজির কোনো ফিকির (চিন্তা-ভাবনা) করতেন না। চব্বিশ ঘণ্টা এখানেই পড়ে থেকে তারা নবীর হাদিস মুখস্থ করতেন। কোরআন মুখস্থ করতেন। ইসলাম শিখতেন। তাদের বলা হতো আসহাবে সুফফা।

আল্লাহর রাসূল নিজে যেভাবে অন্যদের উপহার গ্রহণ করতেন, সেভাবে অন্যদের উপহারও দিতেন। উপহার দিকে তিনি সাহাবিদেরও উদ্বুদ্ধ করতেন। বলতেন, ‘তোমরা পরষ্পরের মধ্যে বেশি করে উপহার দেওয়া-নেওয়া করো। এতে তোমাদের পারষ্পরিক আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।