টঙ্গির তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সকালে (০৭ জানুয়ারি) ইজতেমার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন আগত মুসল্লিরা। মাঠে তারা প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, তালিম, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে সময় কাটাচ্ছেন।
ইজতেমার মাঠের প্রবেশমুখের স্বাগত তোরণ কিংবা টঙ্গির অলি-গলিতে টাঙানো বিশ্ব ইজতেমার সফলতা কামনাসমৃদ্ধ ফেস্টুনগুলো ছাপিয়ে সবর্ত্রই এখন ভীড় তাবলিগের মুসল্লিদের।
স্থান সঙ্কুলান না হওয়া ও মানুষের কষ্ট লাঘব করতে এবার নতুনধারার বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে। এবার দুইপর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও সমগ্র বাংলাদেশের তাবলিগের সাথীরা তাতে অংশ নিতে পারছেন না। প্রথমবারের মতো দেশের মোট ৩২টি জেলা নিয়ে এ বছর ইজতেমার দুইপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী বছরের (২০১৭ সালে) ইজতেমা বাকি ৩২ জেলা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সভাপতিবিহীন বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। এতে অংশ নেবে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা।
রোববার (১০ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথমপর্বের ইজতেমা শেষ হবে। এরপর ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয়পর্ব শুরু হবে। ওই পর্বে অংশ নেবে ঢাকার বাকি অংশসহ ১৬টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয়পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে দুইপর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া ১৭টি জেলা হচ্ছে- ঢাকা (একাংশ), শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও পঞ্চগড়।
১৯৬৭ সালে টঙ্গির পাগাড় গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব ইজতেমা। আর ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা অংশ নেয়। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতের কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।
প্রতি বছরের মতো এবারও সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী, কলকারখানার শ্রমিক ও মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ইজতেমার মাঠের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশ নিয়েছেন।
ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা তাবলিগের মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ইজতেমার মাঠের সব কাজ করা হয় মাশওয়ারার (পরামর্শ) ভিত্তিতে। বিদ্যুৎ সংযোগ, পানি লাইন বসানো, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ কামরা তৈরির কাজও সম্পন্ন হয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের জন্য নির্মিত আবাসস্থলের প্রবেশ পথে প্রথমবারের মতো আর্চওয়ে বসানো হয়েছে।
মুসল্লিদের তুরাগ নদী পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীতে ৯টি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।
ইজতেমার মাঠে স্থাপিত নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাকা দালানে প্রায় ছয় হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে।
ডেসকো ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে।
টঙ্গি সরকারি হাসপাতাল ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করে অপেক্ষা করছে সেবা প্রদানে। এছাড়া মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারাখানার গেট ও টঙ্গি হাসপাতাল মাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যান চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইজতেমার মুসল্লিদের সুবিধার্থে মাঠের বিভিন্ন পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২৮টি স্পেশাল ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজন করা হবে। প্রয়োজনে কোচ আরও বাড়ানো হবে।
মাঠের মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে। এ জন্য ইজতেমায় পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। মাঠের প্রবেশমুখে সার্চ টাওয়ার বসিয়ে সিসি টিভির মাধ্যমের পুরো মাঠ মনিটরিং করবে তারা। সেই সঙ্গে থাকবে তাবলিগের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমএ