মাওলানা ইয়াহয়া ইউসুফ নদভি। ইসলামি ধারায় একজন সুপরিচিত আলেম লেখক।
এ ছাড়াও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তিনি মাদরাতুল কাউসার আল ইসলামিয়াতে শিক্ষকতা করছেন। সম্পাদনা করছেন মাসিক কিশোর স্বপ্ন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সিরাতচর্চাকে দারুণভাবে উপভোগ করেন। বিশেষত শিশুদের জন্য উপাদেয় সাহিত্য রচনায় তিনি তৃপ্তিবোধ করেন। লিখেছেন ছোটদের জন্য শিশু-কিশোর সীরাত সিরিজ এবং গল্পে আঁকা সীরাত : হে মুহাম্মদ। বড়দের জন্য লিখেছেন, তোমার স্মরণে হে রাসুল!। লিখছেন নবীজীর ঘরোয়া জীবন। সিরাত ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার আরো ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- গল্পে আঁকা ইতিহাস, জীবনগড়ার ইতিহাস, তুমি সেই রাণী, আবু গারিবের বন্দী।
রবিউল আউয়াল উপলক্ষ্যে ‘শিশুজীবনে সিরাতচর্চার গুরুত্ব’ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেই আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশ আতাউর রহমান খসরু তুলে এনেছেন পাঠকের জন্য।
বাংলানিউজ: সিরাতচর্চায় শিশুদের নিয়ে কিছু কাজ করেছেন। শিশুজীবনে সিরাত চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে যদি বলতেন?
মাওলানা নদভি: হ্যাঁ, আমি সিরাত নিয়ে কিছু কাজ করেছি। শিশুদের জন্যে লিখেছি, ‘শিশু-কিশোর সীরাত সিরিজ এবং গল্পে আঁকা সীরাত : হে মুহাম্মদ। ’ শিশুদের মন থাকে কোমল। যা দেখে এবং যা পড়ে তাই মনের পেলব জমিনে গেঁথে ফেলে। এ জন্য পড়তে পারার বয়স থেকেই শিশুদের মনে সিরাতের ভালোবাসা, নবীজীর ভালোবাসা ওদের মনের গভীরে প্রোথিত করে দিতে হবে। তাহলে সামনের জীবনটা চলবে নবীপ্রেমের নিরাপদ ভেলায় চড়ে। বাইরের কলুষতা ওকে সহজে স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু সিলেবাসে নেই- এই অজুহাতে আমরা আমাদের শিশুদেরকে অবলীলায় সিরাতের মহাসম্পদ থেকে বঞ্চিত করে চলেছি।
বাংলানিউজ: শিশুদের জন্য সিরাত বিষয়ক কিছু উপহার দিবেন কখন ও কীভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন?
মাওলানা নদভি: স্পষ্ট মনে নেই। শুধু জানি, লিখতে ইচ্ছে হতো সেই ছোট্টবেলা থেকেই। শিশুবেলাতেই সিরাত বিষয়ক কিছু সহজ-কঠিন বই পড়ে ফেলার সুযোগ হয়। কবি গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবীও পড়ে ফেলি তখন। প্রিয় নবীর শৈশব কৈশোরের কাহিনী, বিশেষত মা আমেনার সঙ্গে মদিনা থেকে ফেরার সময় হঠাৎ মাকে হারানোর যে বেদনা-বিধূর চিত্র সে বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সত্যি তা অসাধারণ। ভীষণ রেখাপাত করেছিলো আমার ছোট্ট মনে। এভাবে নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে আমি এবং আমার লেখার বাসনা সিরাতমুখী হয়ে ওঠে। খুব মনে পড়ে; কোরআনে কারিম হেফজ করার সময় আমি একবার বেড়াতে এসেছিলাম আমার চাচার বাসায়। তখন হঠাৎ মনে এক ঝড় উঠলো। লিখতে বসে গেলাম। প্রিয় নবী’র কথা একে একে স্মৃতি থেকে লিখে যেতে লাগলাম। লিখতে লিখতে এসে গেলাম সেই আবওয়ায়। চোখে দরদর করে পানি পড়তে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে লেখা বন্ধ হয়ে গেলো। সে মহান স্মৃতিই আমার সিরাতচর্চার মূল ভিত্তি।
বাংলানিউজ: বাংলা ভাষায় প্রামাণ্য সিরাত গ্রন্থের সংখ্যা এমনি কম। আর শিশুদের জন্য বলতে গেলে নাই। এর কারণ কী? উত্তরণের উপায় কী?
মাওলানা নদভি: আমাদের উদাসীনতা। বড় বড় কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে বাংলাভাষায় যে চর্চা ও গবেষণা হয়েছে, আল্লাহর রাসূলের মহাজীবনকে নিয়ে সে চর্চা ও গবেষণা আমরা করতে পারি নি। পাশাপাশি বাংলাভাষায় নিজস্ব এবং বিদেশি শিশু সাহিত্যে যে ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে, তার সামান্যও সিরাত শিশু সাহিত্যে গড়ে ওঠেনি। এ দায় কার? কেন এই উদাসীনতা? এর জবাব আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
আমি মনে করি, এ থেকে উত্তরণের সহজ উপায় হলো, যারা ইসলাম ও ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসেন এবং যারা লিখতে পারেন, শিশুদের জন্য সিরাত সাহিত্য রচনায় তাদের মনোযোগী হওয়া দরকার।
বাংলানিউজ: শিশুদের জন্য রচিত সিরাত বা সিরাত সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ যা আপনার দৃষ্টি কেড়েছে?
মাওলানা নদভি: এয়াকুব আলী চৌধুরী লিখিত ‘নূর নবী’ বইটি উল্লেখযোগ্য। মঈনুদ্দন লিখিত বইটি আমাকে ছোট্ট বেলায় ভীষণ স্পর্শ করেছিলো। সম্ভবত বইটির নাম- মহানবী।
বাংলানিউজ: ব্যক্তিগত জীবনে সিরাত চর্চাকে কতোটা উপভোগ করেন?
মাওলানা নদভি: ভীষণ। ঘুমোতে গেলেও মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি নবীজীর জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তার কথা বাণী আমার মাঝে শিহরণ তুলছে। ইচ্ছে হয় তখন শত শত বছরের ব্যবধান ভেদ করে সেই পুণ্য যুগে ফিরে যাই।
বাংলা নিউজ: সিরাত বিষয়ে আর যা যা করার স্বপ্ন দেখেন?
মাওলানা নদভি: সিরাত নিয়ে আরও কিছু কাজ করতে চাই। নবীজীর ঘরোয়া জীবন লিখছি। যুদ্ধ জীবনও লিখতে চাই। সিরাতের মাঝে আরও ডুবে থাকতে চাই। নির্দিষ্ট করে কত আর বলা যায়।
বাংলানিউজ: সিরাত চর্চায় পাঠকের জন্য যা বলতে চান। অথচ বলা হয়নি।
মাওলানা নদভি: একটু অন্য রকম করে বলি। মনে করুন, আন্তর্জাতিক একটি সিরাত সম্মেলন হচ্ছে। সেখানে সারা পৃথিবীর অভিভাবকেরা উপস্থিত হয়েছেন। তখন আমি যদি সেখানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পাই এবং কথা বলার সুযোগ আসে তাহলে বলবো-
সম্মানিত অভিভাবক! আজকের এই আন্তর্জাতিক সিরাত সম্মেলন থেকে আমি শুধু একটি কথাই উচ্চারণ করবো! তা হলো- আপনার সন্তান যখন একটু বড় হবে। পড়তে শিখবে। তখন প্রথমেই যে বইটি তার হাতে তুলে দেবেন, তা হবে সিরাতের বই! নবীজীর জীবনকথা। তার আদর্শের কথা। তার সাহাবিদের ত্যাগের কথা। নবীজীকে তাদের ভালোবাসার কথা। আর যদি তা না করেন, উল্টো তাদের হাতে তুলে দিন মিথ্যা কল্পকাহিনী ও রাজ্যের রূপকথা, তাহলে এখানে আসা শুধুই পণ্ডশ্রম। ভণ্ডামি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
এমএ/
** নবীর আদর্শের প্রচার প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব
** অনলাইনে রাসূলের মাহাত্ম্য বেশি বেশি প্রচার করতে হবে
** অনলাইন মিডিয়াই পারে ইসলাম-জঙ্গিবাদের পার্থক্য বোঝাতে
** জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে
** আনফিল্টার্ড তথ্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে
** মহানবীর অনুসারীদের জঙ্গি হয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া অসম্ভব
** চাচার হত্যাকারীকেও ক্ষমা করেছিলেন রাসূল
**মহানবীর চোখে কেউ সংখ্যালঘু নয়
** মহানবীর মধুর ভাষা প্রচারের অপার মাধ্যম ডিজিটাল মিডিয়া
** ‘মহানবী বসে পড়েছিলেন’
** আলেম-ওলামাদের ডিজিটাল মিডিয়ায় আসতে হবে
** বাংলানিউজের ইসলামি সেমিনার শুরু
** প্রিয় নবীর কিছু অনন্য গুণ
** ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর মূল্যবোধ চর্চা
** নবীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ুন, মনে শান্তি পাবেন
** সিরাতে ইবনে কাসির: সিরাত শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ
** সিরাতে ইবনে হিশাম: অনবদ্য এক সিরাত গ্রন্থ
** সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা নিয়ে কিছু কথা
** ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে
** সিরাত কাকে বলে?
** নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
** ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
** নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস
ইসলাম
বাংলানিউজকে মাওলানা ইয়াহয়া ইউসুফ নদভি
শিশুদের মনে গেঁথে দিতে হবে নবীজীর ভালোবাসা
... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।