বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল তার নাম দাওয়াত। তিনি ও তার একনিষ্ঠ সাহাবারা পবিত্র কালেমার দাওয়াত নিয়ে ঘুরেছেন পথে-প্রান্তরে ও মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে।
দাওয়াতের কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘কৌশলে ও সুন্দর ভাষায় মানুষকে ইসলামের পথে দাওয়াত দাও। ’ -সূরা নাহল: ১২৫
আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দিবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে। অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে, যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজের দাওয়াত দিবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে যারা তার দাওয়াত পেয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না। ’ –সহিহ মুসলিম: ৬৯৮০
মহান আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানুষের জন্য। তোমরা তাদেরকে ভালো কাজ করতে বলবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। নিজেদের ঈমান সুদৃঢ় করবে। ’ -সূরা আল ইমরান: ১১০
সাহাবি হজরত হুজায়ফার (রা.) সূত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ করতে থাক এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতে থাক। নচেৎ, অতি দ্রুত মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর আজাব নাজিল করবেন। তখন তোমাদের দোয়া কবুল হবে না। ’ –সুনানে তিরমিজি : ২১৬৯
সাহাবি জাবিরের (রা.) সূত্রে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একদা মহান আল্লাহ জিবরাঈলকে (আ.) নির্দেশ দিলেন, অমুক শহরকে তার অধিবাসীদের ওপর উল্টে দাও। হজরত জিবরাঈল (আ.) বললেন, হে প্রভু! তাদের মাঝে তো আপনার অমুক বান্দা রয়েছে, যে এক মূহুর্তও আপনার অবাধ্য হয়নি। আল্লাহতায়ালা বললেন, তাকেসহ সবাইকে উল্টে দাও। কেননা তাদের ওইসব অনৈসলামিক কার্যকলাপ দেখে তার চেহারাও বিবর্ণ হয় নাই। ’ –আল মুজামুল আওসাত:৭৬৬১
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই উম্মতের শেষের দিকে এমন এক জামাত তৈরি হবে, যারা প্রথম দিকের লোকদের মতো সওয়াবের অধিকারী হবে। তারা ভালো কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, ফিতনাকারীদের প্রতিরোধ করবে। ’ -দালায়িলুন নবুওয়্যাহ: ২৮৭৪
ইমাম নববি (রহ.) বলেছেন, ‘দাওয়াতের কাজ করা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে সব যুগের সবশ্রেণির আলেমরা ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ’
শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আলেম-জাহেল, ধনী-গরিব, বড়-ছোট, নারী-পুরুষ, স্বাধীন-দাস, সৎ-অসৎ, নেককার-বদকার নির্বিশেষে সব পর্যায়ের মুসলমানের ওপর দাওয়াতের কাজ করা ফরজ। নিজ আওতাধীনে দাওয়াতের কাজ করা প্রত্যেকের ওপর ফরজে আইন। গোটা জগতে পর্যাপ্ত পরিমাণে দাওয়াত অব্যাহত থাকা সব মুসলমানের ওপর ফরজে কেফায়া।
বর্তমান দুনিয়াতে যে সংগঠনগুলো ইসলামের দাওয়াতের মিশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ‘তাবলিগ জামাত’ তন্মধ্যে অন্যতম। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে অন্যের দুয়ারে দুয়ারে যেয়ে দাওয়াত দেওয়া, বিশ্বব্যাপী সবার মাঝে দাওয়াতের চেতনা জাগ্রত করার প্রয়াস চালানো এ সংগঠনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
টঙ্গীর তুরাগের পাড়ে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। যাকে আমরা বলতে পারি বার্ষিক কর্মী সম্মেলন। আসলে কর্মী বাহিনীকে দেখলে মনে পড়ে সূরা আল ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াত। যেখানে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য এমন একটি দল থাকতে হবে; যারা মানুষকে নেক কাজের দিকে দাওয়াত দিবে। তারা ভালো কাজের আদেশ করবে, মন্দ থেকে বিরত রাখবে। তারা সফল। ’
বিশ্ব ইজতেমায় আরবি, উর্দূ ও বাংলা ভাষায় বয়ান করেন বিশ্বের বরেণ্য আলেমরা। তারা মহান আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ, নবীদের নবুওয়ত, পরকালের বিনিময়, দাওয়াতের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, দাওয়াতের কৌশল, যে দাওয়াতের মেহনত করবেন- তার নৈতিক ও মানসিক গুণাবলী ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বয়ান করে থাকেন। এ ছাড়াও আলেম, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বয়ানের ব্যবস্থা করা হয়। যারা বিশ্ব ইজতেমার ময়দান থেকে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য সফরে বের হয়ে যান- তাদের কাজের বিষয়েও দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হয় আখেরি মোনাজাতের আগ মুহূর্তে। যা হেদায়েতি বয়ান নামে পরিচিত। আর এভাবেই তাবলিগের কাজ ও বিশ্ব ইজতেমা সমাজ পরিবর্তনের নানা ক্ষেত্রে প্রভূত ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমএ/