ইসলাম সর্বকালের মানবকুলের জন্য একটি সামগ্রিক জীবনবিধান। আখলাকে হাসানা বা সচ্চরিত্র ব্যতীত এ জীবনবিধানের কল্পনাও করা যায় না।
আখলাকে হাসানার সুন্দর কর্মকাণ্ডের ওপরই ইসলামের দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। পবিত্র কোরআনে কারিমে তাকে ‘উসওয়াতুন হাসানা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালার ঘোষণা হচ্ছে, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ অর্থাৎ হে নবী! সুমহান চারিত্রিক গুণাবলি আপনার মধ্যে বিদ্যমান, যা হেদায়েতের জন্য অতি প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ঈমানদার লোকদের মধ্যে ঈমান ও বিশ্বাসের দিক থেকে ওই ব্যক্তিই পূর্ণতাপ্রাপ্ত, যে তাদের মধ্যে নৈতিক চরিত্রের দিক থেকে উত্তম। ’ অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনদের দাঁড়িপাল্লায় নৈতিক চরিত্র অপেক্ষা- অধিক ভারী জিনিস অন্য কিছুই হবে না। ’
অন্য আরেক বর্ণনায় আছে, ‘উত্তম নৈতিকতার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যই আমার আগমন। ’ আখলাকে হাসানা বা সচ্চরিত্রের ভিত্তি হচ্ছে- ঈমান আনয়নপূর্বক আল্লাহকে ভয় করা, মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে অধিক স্মরণ করা এবং সর্বদা সুন্নতের ওপর চলা। সর্বদা ভালো কাজে নিয়োজিত থাকা, মন্দকাজ থেকে বিরত থাকা, এমনকি মন্দ কাজের পথ খুলে যেতে পারে এমন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা হচ্ছে নৈতিকতার মূল চাবিকাঠি।
তাকওয়া বা পরহেজগারি হচ্ছে নৈতিকতার ভূষণ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা বড় বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকো, তবে ছোট ছোট গুনাহগুলো আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেবেন। এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন। ’
নৈতিকতার উত্তম নিদর্শন সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো বান্দা মুত্তাকি লোকদের মধ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত গণ্য হতে পারবে না যতক্ষণ সে কোনো মন্দ কাজ করার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেসব জিনিসও পরিত্যাগ করবে, যাতে কোনো দোষ বা মন্দ নেই।
উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা চলে, প্রত্যেক মানুষের উচিৎ নৈতিকতার চর্চা করা। মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি। আর এই তাকওয়া অর্জনের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, ‘উত্তম চরিত্রের’ অধিকারী হওয়া।
আমদের একটু গভীরভাবে চিন্তা করা উচিৎ, এ দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী । কিছুদিন বসবাস করার পর এ দুনিয়ার মায়া ছেড়ে আমাদেরকে চলে যেতে হবে। একমাত্র ‘আখলাকে হাসানা’ বা উত্তম চরিত্র ছাড়া আর কিছুই আমাদের সঙ্গি হবে না। আমাদের অর্জিত সম্পত্তি, বাড়ী-গাড়ি, সন্তান-সন্ততি কিছুই যাবে না।
অভিজ্ঞ অালেমদের মতে, দৈনন্দিন জীবনে মানুষের প্রতিটি কাজকে সুন্নত মোতাবেক পরিচালনা করার মাধ্যমে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া সম্ভব। তাছাড়া আল্লাহকে অধিক মাত্রায় স্মরণ করা তার নৈকট্য লাভের একটি উত্তম পন্থা। সেই সঙ্গে মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা, কম হাসা, আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকা, সুশিক্ষা অন্বেষণ করা এবং তদনুযায়ী আমল করা, দ্বীনের প্রচারাভিযানে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজ যথারীতি পালনে সচ্চরিত্র সহজে অর্জিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
এমএ/