প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ কিছু সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো ফ্রান্সে মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানে মসজিদে হামলার মতো ঘটনাও ঘটে।
ওই সব মসজিদে দর্শনার্থীদের চা এবং কেক দিয়ে আপ্যায়ন করানো থেকে শুরু করে ইসলাম সম্পর্কে উন্মুক্ত আলোচনারও আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজন ব্যাপক সাড়া ফেলে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও একটি মসজিদ পরিদর্শন করে মুসলমানদের প্রতি সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেন।
ওই কর্মসূচির সফলতার প্রেক্ষিতে সব ধর্মের মানুষের জন্য দেশের মসজিদগুলোর দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ব্রিটেন।
মুসলিমদের প্রতি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অহেতুক আতঙ্ক দূর করতে এবং ইসলাম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতেই এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে দেশটির প্রায় ৮০টি মসজিদ খুলে দেওয়া হবে।
মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেনের (এসসিবি) উদ্যোগে চলতি মাসের ৭ তারিখে মসজিদগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তরাঞ্চলীয় আয়ারল্যান্ডের ৮০টি মসজিদ ‘আমাদের মসজিদে আসুন’ (Visit my mosque) এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশ নেবে।
এমসিবির এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, মুসমানদের জন্য তাদের স্থানীয় প্রতিবেশিদের খুব কাছে পৌঁছানোর এটা একটা বিশেষ সুযোগ।
ওই মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, ‘এই দিনটিতে একজনের সঙ্গে অন্যজনের মুখোমুখি সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হবে। এতে করে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। ’
যে কোনো ধর্মাবলম্বী এবং যে কোনো বিশ্বাসের মানুষই মসজিদে প্রবেশের অনুমতি পাবে। সেখানে যে কোনো প্রশ্ন করার জন্য তাদেরকে সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা মসজিদ ঘুরে দেখতে পারবে, চা-নাস্তা খেতে পারবে এবং চাইলে সেখানে প্রার্থনাও করতে পারবে।
ব্রিটেনে কমপক্ষে ৩০ লাখ মুসলমান বাস করেন। এদের মধ্যে অর্ধেক ব্রিটিশ মুসলিমের জন্ম হয়েছে যুক্তরাজ্যে।
ক্যামবারলেই মসজিদের চেয়ারম্যান আবদুল মাজিদ আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, ‘এটা বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ এবং যারা কোনো ধর্মকে বিশ্বাস করে না উভয়ের জন্যই বড় ধরনের কৃতিত্ব আর এতে করে তারা আমাদের আরো বেশি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। আর আমরা একে অন্যের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে পারব বলে আশা করছি আমরা। ’
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই মসজিদে শুক্রবার প্রায় ৩শ মানুষ জুমার নামাজের জন্য সমবেত হয়।
আবদুল মাজিদ আরও বলেছেন, ‘আমরা একটি ছোট শহরে বাস করি। এখানে আমাদের খুব বেশি সমস্যা নেই। তবে গণমাধ্যমে মুসলমানদের সম্পর্কে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আর এ কারণেই আজ আমরা এ ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি যেন আমাদের মধ্যে থাকা ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর হয়।
গত বছর নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১শ’ ৩০ জন নিহত হয়েছিল। ওই ঘটনার রেশ ব্রিটেনেও ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় দেশ জুড়ে ইসলাম এবং মুসলমানদের নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর এসব বিষয়ে যে মত পার্থক্য রয়েছে তা দূর করতেই দেশের মসজিদগুলোকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এমএ/