ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আল্লাহতায়ালার কুদরত নিয়ে চিন্তাভাবনা করাও ইবাদত

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬
আল্লাহতায়ালার কুদরত নিয়ে চিন্তাভাবনা করাও ইবাদত

বিশাল এ সৃষ্টির ছোট থেকে ছোট, বড় থেকে বড় সবকিছুতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার অগণিত নিদর্শন। মুক্তবুদ্ধির জানালা খোলে গভীর দৃষ্টিতে প্রকৃতির দিকে তাকালে মনের পর্দায় ভেসে উঠে আল্লাহর অসীম কুদরতের খেলা।

বহু দূরের নক্ষত্ররাজি আর খুব কাছের পত্র-পল্লব, বৃহৎ তিমি আর ক্ষুদ্র পিঁপড়া, যে কোনো কিছু নিয়ে ভাবনার সাগরে ডুব দিলে মস্তিষ্কের ভেতর আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। প্রকৃতির সবকিছুই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ, তার অপার শক্তি ও মহিমার প্রমাণ।

বিশালসৃষ্টির জীববৈচিত্র, নান্দনিকতা, নিপুণতা, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে ঈমানদার ব্যক্তির ঈমান বহুগুণ শক্তিশালী হয়, সতেজ হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজনে এবং দিন-রাতের পরিবর্তনে সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শোয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। (তারা স্বত:স্ফূর্তভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয়) হে আমার প্রতিপালক! আপনি এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনি (বৃথা সৃষ্টি করার দোষ থেকে) পবিত্রতম। -সূরা আল ইমরান : ১৯১-১৯২

হজরত আতা, হজরত ইবনে উমর এবং হজরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহুমা একদা হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার কাছে যেয়ে নিবেদন করলেন, আম্মাজান! আমরা আপনার কাছে জানতে এসেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন কাজটি আপনার কাছে বেশি বিষ্ময়কর মনে হয়েছিল? হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু অানহা কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, তার সমস্ত কাজ আমার কাছে অদ্ভুত মনে হতো। তবে একটি ঘটনা শোন। এক রাতে তিনি আমার ঘরে এসে আমার সঙ্গে শয়ন করলেন।

কিছুক্ষণ পর আমাকে বললেন, ‘হে আয়েশা! আমি আমার রবের ইবাদত করতে চাই। আমাকে যেতে দাও। ’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি আপনার একান্ত কাছে থাকতে চাই। আবার এও চাই যে, আপনি মহান আল্লাহর ইবাদত করবেন। তিনি বিছানা থেকে উঠে পবিত্র হয়ে নামাজে দাঁড়ালেন। তিনি কাঁদতে আরম্ভ করলেন। কাঁদতে কাঁদতে তার দাঁড়ি ভিজে গেল, মাটি ভিজে গেল। তিনি কাঁদতে থাকলেন। ফজরের সময় বেলাল ডাকতে এসে যখন দেখল, তিনি এভাবে কাঁদছেন, তখন সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ আপনার পূর্বের ও পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এর পরেও আপনি এত কাঁদছেন কেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘আমি কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব না কেন? আজ রাতে আমার ওপর এ আয়াত (নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজনে এবং ...) অবতীর্ণ হয়েছে। ওই ব্যক্তি বড়ই দুর্ভাগা, যে ব্যক্তি এ আয়াত পাঠ করে অথচ আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না। ’ -ইবনে হিব্বান : ৬২০

শায়খ সোলায়মান দারানি বলেন, বাড়ি থেকে বের হলে যে জিনিসের ওপরই আমার চোখ পড়ে, আমি দেখি, তাতে আমার জন্য আল্লাহর একটি নিয়ামত রয়েছে। হজরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি মন্তব্য করেছেন, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে এক ঘণ্টা পরিমাণ চিন্তাভাবনা করা সারারাত ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রতি উদ্দীপ্ত করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ কোরআনে কারিমের অসংখ্যা জায়গায় মানুষের প্রতি সৃষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। যেমন-

তারা কি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল নিয়ে ভাবে না? -সূরা আরাফ : ১৮৫

আমি কি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করি নাই? পাহাড়গুলোকে পেড়েকস্বরূপ করি নাই? -সূরা নাবা : ৬-১৬

কোন্ জিনিষ দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে? ... মানুষ তার খাদ্য নিয়ে ভেবে দেখুক? -সূরা আবাসা : ১৮-৩২

আল্লাহর অশেষ দয়ার নিদর্শনাবলীর প্রতি লক্ষ করুন। তিনি কিভাবে শুষ্ক মাটিকে পুনরায় সঞ্জীবিত করেন। -সূরা আর রূম : ৫০

উপরোক্ত আয়াতগুলোর আলোকে উজ্জীবিত হয়ে সাহাবাদের কয়েকজন একত্রিত হলে আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন। সৃষ্টির নিপুণতা ও বিষ্ময় নিয়ে আলোচনা করতেন। মত বিনিময় করতেন। একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবিকে এ রূপ চিন্তাভাবনা ও আলোচনা করতে দেখে বললেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করো। কিন্তু আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করো না। ’ -কানজুল উম্মাল : ৫৭০৮



বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।