লোকমুখে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ঘরে মাকড়সার জাল থাকলে অভাব অনটন দেখা দেয়। এটা নিয়ে অনেককে তর্কে জড়াতেও দেখা যায়।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর কোনো প্রমাণ নেই। কোনো কোনো তাফসিরের কিতাবে হজরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ ধরনের একটি কথা উল্লেখ আছে বলে পাওয়া যায়। কিন্তু এ কথা বিশেষজ্ঞ গবেষকদের কাছে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
তবে হ্যাঁ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষদের আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের বিভিন্ন স্থানে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। ’ –সূরা আল বাকারা: ২২২
‘বলো, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় করো- যাতে তোমরা মুক্তি পাও। ’ –সূরা মায়েদা: ১০০
‘অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। ’ –সূরা আল আলা : ১৪
‘হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন, আপন পোশাক পরিচ্ছন্ন করুন এবং ময়লা আবর্জনা থেকে দূরে থাকুন। -সূরা মুদ্দাস্সির: ০১-০৫
‘হে রাসূলরা, আপনারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার খান এবং সৎকাজ করুন!’ –সূরা মুমিনুন: ৫১
আর হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। ’ –সহিহ মুসলিম শরিফ: ২/০৪৩২
তবে এই হাদিসটি লোকমুখে প্রচলিত এভাবে, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। ’ আসলে সহিহ হাদিস গ্রন্থে একে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে। বর্ণিত কোরআন ও হাদিসের অালোকে বলা যায়, ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করে ঈমানের অর্ধেক বলে ঘোষণা করেছে।
সুতরাং ঘর-বাড়িকে মাকড়সার জাল এবং অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যে কর্তব্য- তা আর নতুনভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিছু দার্শনিকের অভিমত হলো, ঘরে মাকড়সার জাল থাকলে অভাব অনটন দেখা দেয়- এটা বলার কারণ হলো, মাকড়সার জালের মতো হালকা ময়লা যে পরিষ্কার রাখে না সে অলস। আর অলসের পরিণতি দারিদ্র। এ কথা থেকে প্রচলিত হয়ে গেছে, ঘরে মাকড়সার জাল থাকলে অভাব অনটন দেখা দেয়।
অনেকে মাকড়সা মারতে নিষেধ করেন। এ বিষয়ে ধর্মবেত্তাদের অভিমত হলো, কোনো মাকড়সা যদি ক্ষতিকর বা বিষাক্ত প্রকৃতির হয়- তবে তা মেরে ফেলা জায়েয। কিন্তু যদি তা ক্ষতিকর না হয় সেক্ষেত্রে না মেরে বাসা-বাড়ি থেকে তা ঝেড়ে ফেলে দেয়াই শ্রেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমএ