একজন ইমামকে মুসল্লিদের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। দীর্ঘ প্রায় চার দশকের ইমামতির জীবনে মুখোমুখি হওয়া এক মুসল্লির একটি প্রশ্ন প্রায়ই মনে পড়ে।
সেদিন তার প্রশ্নের উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারিনি। বুঝেছিলাম বেশ কিছুদিন পর। যখন শুনলাম মসজিদ, মাদ্রাসার জন্য দান বাবদ আদায় করা টাকার রসিদে দাতার নামের শুরুতে আলহাজ বা হাজি না লেখায় অনেকেই রাগ করেছেন- এমন কিছু ঘটনা। আমিও এমন মানুষ দেখেছি। ফলে ওই মুসল্লির মতো আমারও মনে প্রশ্ন হলো, নামের টাইটেল হিসেবে হাজি শব্দ ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে।
হজ একটি ফরজ ইবাদত। সেটাকে পরিচিতির চিহ্ন ও টাইটেল হিসেবে নামের আগে যোগ করা কতটা যুক্তিসঙ্গত? আমার মনে হয় বিষয়টি বিবেচনার দাবী রাখে। নামের আগে আলহাজ যোগ করাটা রিয়া বা লৌকিকতার পরিচয়কেই প্রকাশ করে, যা একজন হাজির জান্নাতপ্রাপ্তিকে অসম্ভব করে তুলতে পারে।
সুনাম বা খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে অথবা মানুষকে দেখানোর জন্য এক কথায় পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে যে ইবাদত করা হয়, তাকে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রিয়া বলা হয়। আর রিয়াকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট শিরক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি , যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ে সে শিরক করে আর যে মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে রোজা রাখে সে শিরক করে এবং যে মানুষ দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করে, সে শিরক করে। -মুসনাদে আহমাদ
নাম তো সেটাই, যেটা সন্তান জন্মের পর বাবা-মা তার পরিচিতির জন্য রেখে থাকেন। জীবনের দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে হজ করার পরে পিতা-মাতার রাখা নামের সঙ্গে নতুন টাইটেল যোগ করার অর্থ যদি হয় পুনঃনামকরণ আর উদ্দেশ্য যদি হয় সামাজিক স্বীকৃতি আদায়, তা হলে তাকে রিয়া বা লৌকিকতা না বলে আর কিইবা বলা যেতে পারে? আর এই লৌকিকতা হয়তো লোকসমাজে সম্মান এনে দিতে পারে; কিন্তু সেটা মহান আল্লাহর দরবারে বড় লাঞ্ছনার কারণ হয়ে উঠবে।
হজরত জুনদুব রাযিয়াল্লাহু আনহু এক হাদিসে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো আমল করে আল্লাহতায়ালা তার দোষ-ত্রুটি মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো আমল করবে আল্লাহতায়ালা তার সঙ্গে লোক দেখানোর মতো আচরণ করবেন। আমলের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হবে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
এ ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে কারিমের একটি বাণী বিশেষভাবে স্মরণীয়, ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আখেরাতের ফসল কামনা করে আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি। আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দিই; কিন্তু তার জন্য আখেরাতে কোনো অংশই থাকবে না। ’ -সূরা আশ শুরা :২০
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
এমএ/