থাইল্যান্ডে প্রায় সাত কোটি জনসংখ্যার প্রতি ২০ জনের একজন মুসলমান। দেশটিতে ৯৫ লাখের বেশি মুসলমান রয়েছে।
থাইল্যান্ডের মুসলিম প্রধান তিনটি রাজ্য হলো- পাত্তানি, নারাথিওয়াট ও ইয়ালা। এই তিনটি প্রদেশে থাইল্যান্ডের মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বাস করেন। বিগত এক শতাব্দী আগে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি স্বাধীন মুসলিম সালতানাত হিসেবে পরিচিত ছিল। এ ছাড়া মালয়েশিয়া সংলগ্ন সাতুন প্রদেশেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
থাইল্যান্ড সম্পর্কে অনেকেরই খারাপ ধারণা আছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যা প্রয়োজন সবই এখানে আছে। এত কিছুর পরও আশার কথা হলো, থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক সময়ে ‘আল ফাতুনি’ নামে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চালু হয়েছে ইসলামি ব্যাংক ‘ইসলামি ব্যাংক অব থাইল্যান্ড। ’ যার বেশিরভাগ গ্রাহকই হচ্ছেন অমুসলিম। আর ব্যাংকটির ডিপোজিটও সন্তোষজনক বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তা ছাড়া থাইল্যান্ডে হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের সেরা ‘রেড বোল’ নামে এই পানীয়টিও হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজেরই একটি পণ্য।
আরও মজার বিষয় হলো, এখন থাইল্যান্ডের মসজিদগুলোও পর্যটকদের টানছে। অন ইসলামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়া প্রায় ১০ শতাংশ পর্যটক বেশ ঘটা করে ঐতিহাসিক মসজিদগুলো দেখতে যান। ফলে ওই সব মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে খাবার ও হালকা শখের জিনিস বেচাকেনার দোকান।
থাইল্যান্ডে হালাল খাবারকে আরও জনপ্রিয় করতে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ওই দেশে অবস্থিত কাতার দূতাবাসের উদ্যোগে হালাল খাদ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এ প্রদর্শনীর অবকাশে পবিত্র কোরআনে কারিম তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন গ্রুপে অনুষ্ঠিত এ কোরআন প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব ছিলেন থাইল্যান্ড ও আল আজহার ইসলামি কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।
থাইল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানদেরকে কোরআনে কারিম হেফজ, তেলাওয়াত এবং হাদিস পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান ও গবেষণার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাটির ব্যবস্থা করা হয়। এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠান অায়োজনের জন্যে প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত।
৫ টি গ্রুপে বয়সভিত্তিক এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতি গ্রুপের বিজয়ী প্রতিদ্বন্দীদের বিভিন্ন অংকের নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
থাইল্যান্ডে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মসজিদ (৩ হাজার ৪ শ’ ৯৪টি) রয়েছে। এর মাঝে প্রাচীন কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৩শ’ বছর পূর্বে। এসব মসজিদের প্রায় সবগুলোর সঙ্গেই রয়েছে মাদ্রাসা। হাল সময়ে থাইল্যান্ডে তাবলিগের কাজ এগিয়ে চলছে প্রচণ্ড গতিতে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো অনেকটা স্বাধীনভাবেই পালন করতে পারেন। দুই ঈদে সরকারি ছুটি না থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে খুব সহজেই ছুটি নেওয়া যায়। রোজার সময় এখানকার মুসলমানরা একসঙ্গে মসজিদে ইফতারের আয়োজন করতে পারেন। সেই সঙ্গে তারাবি ও ঈদের নামাজও। অনেক মসজিদে জুমার দিন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। থাই মিষ্টি, ভাত, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, বিভিন্ন রকমের ফল ও কোকাকোলা দিয়ে আগত মুসল্লিদের আপ্যায়ন করা হয়। এটা তাদের আন্তরিকতার প্রকাশই বটে। আমরা প্রত্যাশা করি, থাইল্যান্ডের মুসলমানরা পরস্পরে এমন আন্তরিকতা ও মমতায় জড়িয়ে থাকুক যুগ-যুগান্তর।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমএ/