ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জর্ডানের ৭ বছর বয়সী কোরআনের হাফেজ নুরের কথা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
জর্ডানের ৭ বছর বয়সী কোরআনের হাফেজ নুরের কথা

জর্ডান পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। সৌদি আরব, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল ঘিরে আছে জর্ডানকে চার দিক থেকে।

রাজধানীর নাম আম্মান।

জর্ডানকে বলা হয় আধুনিক আরব রাষ্ট্র। তবে ইসরাইলের সঙ্গে যে দু-একটি আরব দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে জর্ডান তার একটি।

দেশটির আয়তন ৯২,৩০০ বর্গকিলোমিটার। প্রশাসনিক কাজের জন্য জর্ডানকে ১২টি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে। জর্ডানের জনসংখ্যা ৮০ লাখের কিছু বেশি। এ জনসংখ্যার ৯৫-৯৮ শতাংশই আরব। দেশটির ২ থেকে ৫ শতাংশ অনারবীয় লোকদের মধ্যে রয়েছে চেচেন, আর্মেনিয়া, তুর্কমেনিস্তানের জনগণ ও বেদুইনরা। তাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ নৃতাত্ত্বিক পরিচয় রয়েছে।

জর্ডানের প্রধান ধর্ম হলো ইসলাম। আরব ও অনারব উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই ইসলাম প্রধান ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। দেশটির রাষ্ট্রীয় ধর্মও ইসলাম। এর কারণও যৌক্তিক। দেশের ৯২ শতাংশ লোক মুসলিম। আর মুসলমানদের মধ্যে সুন্নিরাই এখানে প্রবল। আরব ও অনারব উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই রয়েছে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান। জর্ডানের ৬ শতাংশ জনগণ খ্রিস্টান। জর্ডানে অবস্থিত সব সম্প্রদায়ই যার যার নিজের বিশ্বাস, আদর্শ নিয়ে চললেও সবাই জর্ডানের ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে প্রবলভাবে একাত্মতা প্রকাশ করে থাকেন।

জর্ডানের সরকারি ভাষা আরবি। কিন্তু ব্যবসায়-বাণিজ্য, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষিত লোকদের মধ্যে ইংরেজি ব্যাপকভাবে চর্চা হয়। সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে বাধ্যতামূলক আরবি ও ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হয়। জর্ডানের রেডিও আরবি, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় তাদের অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে।

জর্ডানে সাক্ষরতার হার ৯১.১ শতাংশ। জর্ডানের শিক্ষাব্যবস্থা আরব বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থানের দাবিদার এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় থাকা এক শিক্ষা ব্যবস্থা। জর্ডানের বার্ষিক বাজেটের ২০.৫ শতাংশ বরাদ্দ শিক্ষা খাতে, যেখানে তুরস্ক ও সিরিয়ার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ যথাক্রমে ২.৫ শতাংশ ও ৩.৮৬ শতাংশ। জর্ডানের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।

জর্ডানের ঐতিহ্য মতে সেদেশের প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই রয়েছে কোরআনে কারিমের হাফেজ। তারা ছেলে-মেয়েদের আগে কোরআন সহিহ-শুদ্ধভাবে শেখানোর ব্যবস্থা করে। এর পর আগ্রহীরা কোরআনের হাফেজ হয়।

কোরআন হেফজের প্রতি তাদের এমন আগ্রহের প্রেক্ষিতে অসাধারণ মেধাবীর কথা ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসী জেনেছেন। যেমন জর্ডানের ১২ বছর বয়সী হাদিল সাইয়্যিদ আল সিদাভি নামের এক কিশোরী নিজের দৃঢ় চেষ্টা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাত্র ৭ মাসে সম্পূর্ণ কোরআন হেফজ করতে সক্ষম হয়।

এর আগে ৭ বছরের নুর শরীফ আবুল লাইল নামের এক কিশোরী পুরো কোরআন হেফজ করে সে দেশের সর্বকনিষ্ঠ হাফেজের খ্যাতি অর্জন করেছেন।

নুর শরীফ জর্ডানের রামছা শহরে বসবাস করেন।

গত বছর পবিত্র রমজান মাসে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফলতার সাক্ষর রাখে।

সম্প্রতি তার ওই কীর্তিতে রামছা এনডাউমেন্ট শহরের নুর মসজিদে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজনে নুর শরীফ আবুল লাইল, সাইয়্যেদ ইউসুফ আল সাইদাভিসহ জর্ডানের বেশ কয়েকজন তরুণ হাফেজকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে আকষর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো নুর শরীফ। সম্মাননা অনুষ্ঠানে নুর বলেন, আমি আসলে বুঝিনি আমি কী করেছি। আমাকে আসলে কোরআন মুখস্থ করার নেশায় পেয়ে বসেছিল। তাই আমি কোরআন মুখস্থ করতে থাকি।

লাজুক কন্ঠে নুর সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, অনেকে কোরআন মুখস্থ করে ধরে রাখতে পারে না। তাই আমি সবার কাছে দোয়া চাই, আজীবন কোরআনকে যেনো ধারণ করে চলতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।