জ্ঞানীরা বলেন, দু’টি ঋণ কখনও পরিশোধ করা যায় না। একটি মায়ের দুধের ঋণ, অন্যটি শহীদদের রক্তের ঋণ।
যারা আমাদের ভাষার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে রক্তপিপাসু বন্দুকের নলের সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়েছিল আমরা তাদের ভুলতে পারি না। তারা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তারা আমাদের গর্ব। তারা আমাদের অহংকার। তাদের ত্যাগের কথা, তাদের অবদানের কথা, তাদের ঋণের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তাদের স্মরণীয় করে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
এ গুরুদায়িত্ব পালনের ধরন বিভিন্ন হতে পারে। তবে সবচেয়ে সুন্দর হয়- সকল বীর শহীদের নামে, তাদের স্মরণে মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, বৃহৎ সেতু ও ওভার ব্রিজসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা।
এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে জাতীয় শহীদদের স্মরণের জন্য বরাদ্দ হওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও স্থাপনা প্রত্যক্ষভাবে জনগণকে সারাবছর উপকৃত করবে। এ সব কিছু সরাসরি জনস্বার্থে ব্যবহার হবে। সেবা গ্রহণ করতে আসা জনগণের উপস্থিতিতে শহীদদের স্মরণ হবে আরও অনেক বেশি সতেজ, প্রাণবন্ত ও সার্থক।
সেবাপ্রার্থীদের আসা-যাওয়া জাতিকে প্রতিদিন শহীদদের কথা স্মরণ করাবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার দ্বারা শহীদরা জীবিতকালের লালিত ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও উপকৃত হবেন।
আমাদের জাতি বিনির্মাণে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ধর্মবিশ্বাসে মুসলমান। মুসলমানরা মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে পরকাল নামে বিশ্বাস করেন। পরকালের সুখ-শান্তিকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। পবিত্র হাদিসের ভাষ্যমতে, মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সে পানিতে হাবুডুবু খেতে থাকা ব্যক্তির মতো বিপদসঙ্কুল অবস্থায় জীবিতদের অপেক্ষায় থাকে। কোনো জীবিত ব্যক্তি তার কোনো উপকার করে কি-না। সে নিজে নিজের উপকারের জন্য কিছুই করতে পারে না। জীবিতরা যদি তার জন্য দোয়া, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, তার জন্য দান-সদকা করে- তবে তার বিদেহী আত্মার উপকার হয়।
মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী অন্য কিছু দ্বারা মৃত ব্যক্তির আত্মার উপকার হয় না। তাই শহীদদের নামে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনা করার দ্বারা তাদের বিশ্বাসের আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায় তাদের পরকালীন জীবনে উপকার হবে। তাদের আত্মার উপকার হবে। তাদের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। তারা তাদের পরকালীন জীবনে শান্তিতে থাকবে। তারা যেখানে আছেন, সেখানে আরামে থাকবেন।
শহীদদের স্মরণে মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, সেতু ইত্যাদি স্থাপন করার দ্বারা তাদের স্মরণ অম্লান থাকবে এবং পরকালীন জীবনে তারা লাভবান হবেন। আর তাদের যাপিত জীবনের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করা হবে। যারা আমাদের জন্য, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে পরকালে চলে গেছেন- আমরা তো আর কোনোভাবেই উপকার করতে পারব না। সেক্ষেত্রে তাদের ধর্মবিশ্বাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এমন কিছু করাটা কি আমাদের বিবেক ও নৈতিকতার দাবি নয়, যা তাদের পরকালীন জীবনকে উপকার করবে?
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
এমএ
** নবীদের কাছে মাতৃভাষায় আল্লাহর বিধান এসেছে