দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত তেরটি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবিশিষ্ট দেশ মালয়েশিয়া। প্রাকৃতিক সম্পদে দেশটি ব্যাপক সমৃদ্ধশালী; বিশেষ করে কৃষি, বন এবং খনিজ সম্পদে।
বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় আয়তন ৩,২৯,৮৪৭ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী এবং সর্ববৃহৎ শহর কুয়ালালামপুর আর প্রশাসনিক রাজধানীর নাম পুত্রজায়া।
প্রায় তিন কোটি মানুষের দেশ মালয়েশিয়ার ৬০ শতাংশের বেশি মুসলমানের বসবাস৷ দেশটিতে বিখ্যাত ও দৃষ্টিনন্দন অনেকগুলো মসজিদ রয়েছে। রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত মসজিদে নেগারা সেদেশের জাতীয় মসজিদ। প্রায় ১৩ একর বাগানযুক্ত জায়গায় মসজিদটি অবস্থিত।
মালয়েশিয়ার উল্লেখযোগ্য আরেকটি মসজিদ হলো- জামেক মসজিদ। এটা নির্মিত হয় ১৯০৭ সালে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ১৯০৯ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় মসজিদ নির্মাণের আগে এটি ছিল কুয়ালালামপুরের প্রধান মসজিদ।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সামনে পুত্রা স্কয়ারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত পুত্রা মসজিদও বিখ্যাত একটি মসজিদ। মনোরম গোলাপি বর্ণের মসজিদটি পুত্রজায়ার কেন্দ্রীয় মসজিদ।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার ক্রিস্টাল মসজিদকে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন বলে মনে করা হয়। মসজিদটি মালয়েশিয়ার কুয়ালা তেরেনগানু এলাকার পোলাও ওয়ান ম্যান দ্বীপে অবস্থিত। নির্মাণ শৈলী ও স্থাপত্য নিদর্শনের দিক দিয়ে এটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মসজিদের অন্যতম। নৈসর্গিক পরিবেশের কারণে মসজিদের অভ্যন্তর ও বহিরাঙ্গন পরিবেশ বান্ধব। প্রাকৃতিক শোভা ও মানুষের নির্মাণ শৈলীর অপূরব একাত্মতা ঘটেছে এ মসজিদে। স্বচ্ছ কাঁচ ও লৌহ দন্ড দিয়ে পুরো মসজিদটি নির্মিত।
মালয়েশিয়ায় শরিয়া আদালত চালু আছে। সেদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব দারুণভাবে লক্ষণীয়। রয়েছে দেশটিতে প্রচুর মাদ্রাসা। কোরআন শিক্ষার প্রচলন দেশটির ঐতিহ্যের অংশবিশেষ।
মালয়েশিয়ার সরকারের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে বয়স ও অংশভিত্তিক (পারা) হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি শেষ হলো- মালয়েশিয়ায় ৩৭তম জাতীয় হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা।
ওই প্রতিযোগিতায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুর হেদায়েত অংশগ্রহণ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। ২২ বছর বয়সি এই নারী শিশুকাল থেকেই অন্ধ। বর্তমানে নূর মালয়েশিয়ার ইসলামিক স্টাডিজ জোহর কলেজে অধ্যয়নরত।
হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রতিযোগী ছিলো সে। তার পুরো নাম নুর হেদায়েত মুহদ ইউসুফ। তিনি কোরআনে কারিমের প্রথম থেকে দশ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেছেন। তার ইচ্ছা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পুরো কোরআন মুখস্থ করার।
এ প্রসঙ্গে নুর হেদায়েত বলেন, কোরআন হেফজ করা একটি উত্তম কাজ। বিশেষ করে যারা আমার মতো দৃষ্টিহীন। আমি ৩ বছর বয়স থেকেই ব্রেইল বর্ণমালায় কোরআন তেলাওয়াত করা শিখছি এবং ১৬ বছর বয়স থেকে কোরআন মুখস্থ করা শুরু করি।
নুর আরও বলেন, কোরআন হেফজের ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীনতা আমাকে কোনো বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনি। আমি এই প্রথম বারের মতো কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছি। তবে এর পূর্বে আমি দু’বার জোহর প্রদেশে হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম।
নুর হেদায়েত ও তার ২৬ বছর বয়সী বড় ভাই দারুল কোরআন নামক মাদ্রাসায় কোরআন শিখেছেন।
উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ৩৭তম জাতীয় হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন প্রদেশের ৭৮ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতাটি মালয়েশিয়ার পেরাক রাজ্যের ইপো শহরে ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হয় ২০ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
এমএ/