হজরত আবু জর গিফারি রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নবীদের সংখ্যা কত? তিনি জবাব দিলেন, ১ লাখ ২৪ হাজার। তাদের মধ্যে ৩১৫ জন হচ্ছেন রাসূল।
তবে কোরআনে কারিমে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের কারও কারও আলোচনা বিভিন্ন সূরায় একাধিক জায়গায় স্থান পেয়েছে। আবার কারও কারও নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এর সংখ্যা মাত্র ৫টি।
কোরআনে কারিম যেহেতু হেদায়েতের বাণী ও উপদেশগ্রন্থ, তাই অতীতকালের জাতি ও সম্প্রদায়ের ঘটনাবলি, তাদের ভালো-মন্দ আমল ও তার পরিণতি বর্ণনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ধারা বর্ণনাপদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। বরং সত্য প্রচারের লক্ষ্যে দাওয়াত প্রদানের মুখ্যতম পন্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে প্রাচীনকালের সম্প্রদায় ও তাদের প্রতি প্রেরিত পয়গম্বরদের আলোচনা বারবার শ্রবণ করার ফলে শ্রোতাদের অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যেতে পারে এবং তা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগীও বটে। কোরআনে কারিমে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম হলো-
১. হজরত আদম আলাইহিস সালাম। মোট ৯টি সূরার ২৫ জায়গায় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সর্বপ্রথম মানুষ ও নবী ছিলেন।
২. হজরত ইদরিস আলাইহিস সালাম। কোরআনের দু’টি সূরায় দু’বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেছেন। আল্লাহতায়ালা তাকে সিদ্দিক হিসেবে কোরআনে আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি সর্বপ্রথম কাপড় সেলাই করে পরিধান করা শুরু করেন।
৩. হজরত নুহ আলাইহিস সালাম। ২৮টি সূরায় ৪৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। তিনি নিজ জাতিকে সাড়ে ৯শ’ বছর দাওয়াত দিয়েছেন। তার ছেলে কেনানকে কুফরির কারণে আল্লাহতায়ালা মহাপ্লাবনে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
৪. হজরত হুদ আলাইহিস সালামের নাম তিনটি সূরায় সাতবার উল্লেখিত হয়েছে। তাকে আদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়কে প্লাবন দ্বারা ধ্বংস করার পর সর্বপ্রথম তার সম্প্রদায়ের লোকেরা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তাদেরকে প্রচন্ড ঝড় দ্বারা ধ্বংস করে দেন।
৫. হজরত সালেহ আলাইহিস সালামের নাম চারটি সূরায় ৯ স্থানে উল্লেখ আছে। তাকে ছামূদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়। সালেহ (আ.)-এর মুজেযা ছিল উটনি।
৬. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নাম ২৫ সূরায় ৬৯ বার উল্লেখ হয়েছে। তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন ও ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। পরে আল্লাহতায়ালার হুকুমে স্ত্রী ও শিশু সন্তান ইসমাঈলকে জনমানবহীন মক্কায় রেখে আসেন।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আবুল আম্বিয়া বা নবীদের পিতা বলা হয়। তিনি ছেলে ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন ও সর্বপ্রথম মানুষকে বায়তুল্লাহর হজ করার জন্য আহবান করেন।
৭. হজরত লুত আলাইহিস সালাম। চৌদ্দটি সূরায় ২৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম। তার স্ত্রী কাফের ছিল। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা সমকামিতার মতো পাপে লিপ্ত ছিলো। ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
৮. হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। আট সূরায় ১২ জায়গায় উল্লেখ হয়েছে এই নবীর নাম। জন্মের পূর্বেই তাকে বিজ্ঞ বলে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।
৯. হজরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। কোরআনের ১২টি সূরায় মোট ১৭ বার আলোচিত হয়েছে তার নাম। তিনি ও ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে ভাই ছিলেন।
১০. হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। ১০টি সূরায় ১৬ বার আলোচিত হয়েছে তার নাম। তার আরেক নাম হলো- ইসরাইল। তার নামানুসারে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়েছে।
১১. হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনটি সূরায় ২৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। এ ছাড়া সূরা ইউসুফ নামে হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র সূরা রয়েছে কোরআনে। তিনি নিজে নবী ছিলেন এবং তার পিতা ইয়াকুব (আ.), তার দাদা ইসহাক (আ.) ও পরদাদা ইবরাহীম (আ) নবী ছিলেন।
১২. হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম। চার সূরায় ১১ বার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা মাপে বা ওজনে কম দেওয়ার প্রেক্ষিতে আজাবপ্রাপ্ত হয়েছিল।
১৩. হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম। চারটি সূরার চার জায়গায় আলোচিত হয়েছে তার নাম। আল্লাহতায়ালা তাকে দীর্ঘকাল কঠিন অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
১৪. হজরত যুলকিফল আলাইহিস সালাম। দু’টি সূরায় দু’বার আলোচিত হয়েছে তার নাম।
১৫. হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশি বার তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৪টি সূরায় ১৩৭ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। বনী ইসরাঈলের প্রথম নবী ছিলেন তিনি। জন্মের পর মুসা আলাইহিস সালামকে তার মা বাক্সে ভরে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহর কুদরত হিসেবে পরে তিনি জালেম বাদশা ফেরাউনের বাড়ীতে লালিত-পালিত হন। নবী মূসাকে আল্লাহতায়ালা অনেকগুলো মুজেযা দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একটি হলো- মূসা (আ.) তার হাতের লাঠি মাটিতে রেখে দিলে তা বিশাল বড় সাপে পরিণত হতো। পরে তিনি সেটা হাতে নিলে আবার লাঠি হয়ে যেত।
১৬. হজরত হারুন আলাইহিস সালাম। ১৩টি সূরায় ২০ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। তিনি নবী মূসা (আ.)-এর ভাই ছিলেন। বাগ্মীতার পারদর্শী ছিলেন তিনি।
১৭. হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম। ৯টি সূরায় ১৬ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি নিজে রোজগার করে সংসার চালাতেন। তাকে যাবুর কিতাব প্রদান করা হয়েছিল। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন রাখতেন না।
১৮. হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম। সাতটি সূরায় ১৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি সারা পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন। পশু-পাখীদের ভাষা বুঝাসহ মুজেযাস্বরূপ বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন তিনি।
১৯. হজরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম। দু’টি সূরায় তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম।
২০. হজরত ইয়াসা আলাইহিস সালাম। কোরআনে কারিমের দু’টি সূরায় দু’বার অালোচনা করা হয়েছে তার প্রসঙ্গ।
২১. হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম। দু’টি সূরায় দু’বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তাকে মাছে গিলে ফেলেছিল। পরে তিনি দোয়া করার পর আল্লাহতায়ালা তাকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি নিনুওয়া এলাকার লোকদের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। পূর্ববর্তী সমস্ত নবীর অধিকাংশ উম্মত তাদের সঙ্গে কুফরি করলেও ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায়ের সবাই তার প্রতি ঈমান এনেছিলেন।
২২. হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম। চারটি সূরায় সাতবার উল্লেখ হয়েছে পেশায় কাঠুরে এই নবীর নাম।
২৩. হজরত ইয়াইয়া আলাইহিম সালাম। চারটি সূরায় পাঁচবার উল্লেখ হয়েছে তার প্রসঙ্গ। তাকে কিশোর অবস্থাতেই আল্লাহ জ্ঞানী করেছিলেন এবং তাকে তাওরাতের শিক্ষা দিয়েছিলেন।
২৪. হজরত ঈসা আলাইহি সালাম। ১১টি সূরায় ২৫ বার উল্লেখ হয়েছে তার প্রসঙ্গে। তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের সর্বশেষ নবী। তার আরেক নাম মাসিহ।
২৫. হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চারটি সূরায় মাত্র চার জায়গায় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে তার গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথবা আইয়ুহান নবী কিংবা আইয়ুহার রাসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা বিশ্বনবীর সম্মান ও মর্যাদার পরিচয় বহন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
এমএ/