‘সে অনেক খারাপ! তার পরও তো দেখি সে খুব ভালো আছে!’ ‘অমুক তো এমন কোনো মন্দ বা পাপ কাজ নেই- যা সে করে না। এর পরও সে জীবনে বাঁধাহীনভাবে উন্নতি করে যাচ্ছে!’ ‘সে যদি আল্লাহর কাছে অপছন্দের হতো; তবে কি এতো মানুষ তার পক্ষে থাকত, তার সুনাম করত!’
দুনিয়ার বাস্তবতার নিরিখে এ ধরনের কিছু জটিল প্রশ্ন বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, সৎ-অসৎ নির্বিশেষে অনেকের মনেই জেগে থাকে।
সমাজের বাস্তবতায় কারো মনের ভেতর যদি এ প্রশ্নগুলো জেগে উঠে, আর সে যদি এ প্রশ্নের সঠিক সমাধান না পায়; তবে স্বাভাবিকভাবেই সে ঈমান থেকে বঞ্চিত হবে। সে ঈমানদার হয়ে থাকলে তার ঈমান হারাবে। আর ঈমান না থাকলে ঈমানের পথ তার জন্য কঠিনতর হয়ে যাবে। কেননা, এ প্রশ্নগুলোর গভীরে গেলে আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
মানুষের জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ তার ঈমানকে হেফাজত করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা এ প্রশ্নগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৯৬-১৯৮ নম্বর আয়াতে উত্থাপিত এসব প্রশ্নের উত্তর আল্লাহতায়ালা যৌক্তিক পেশ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দেশে দেশে অবিশ্বাসীদের (বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, সামরিক, প্রমোদ) ভ্রমণ তোমাকে যেন প্রতারিত না করে। তাদের এ সব ভোগ খুবই সামান্য। অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যা নিকৃষ্ট আবাস্থল। পক্ষান্তরে যারা তাদের রবকে ভয় করে (গুনাহর কাজ থেকে বিরত থাকে) তাদের জন্য রয়েছে বৃহৎ চিরসবুজ উদ্যান। অনেকগুলো নদী সেখানে প্রবাহিত হয়। তারা চিরকাল সেখানে থাকবে। তাদের সেবা-যত্ন করা হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে। যারা দুনিয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসারী তাদের জন্য আল্লাহর আতিথেয়তা অনেক শ্রেয়। ’
দুনিয়াতে স্বাস্থ্য, সম্পদ, জনবল, ক্ষমতা ইত্যাদি দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা তার আনুগত্য ও অবাধ্যতাকে মূল্যায়ন করবেন না। তিনি তার আনুগত্য ও অবাধ্যতাকে মূল্যায়ন করে মানুষকে বিভক্ত করবেন পরকালে। তাই অবিশ্বাসী ও অবাধ্যদের বৈষয়িক ও পার্থিব সফলতা দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার বা সংশয়ী হওয়ার কিছু নেই। তাদের সব সফলতা ও উন্নতি অতি ক্ষণিকের জন্য। এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। চরম ব্যর্থতা আর আক্ষেপ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বিপরীতে কোনো বিশ্বাসী এবং অনুগত ব্যক্তি যদি পার্থিব জীবনে কষ্টে থাকে, নিজেকে পরাজিত মনে করে; তবুও তার হতাশার কিছুই নেই। পার্থিব জীবনের সকল ক্লেশ ও পরাজয় যে কোনো সময় তাকে চিরবিদায় জানাবে। আর সুনিশ্চিত চিরস্থায়ী সফলতা তাকে অভ্যর্থনা জানাবে।
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা সন্দেহ করে তারা সফল হবে না। দুনিয়াতে জীবন উপভোগ করার পর তারা আমার কাছে ফিরে আসবে। তখন অবিশ্বাসের জন্য তাদের কঠিন শাস্তি দিব। ’ -সূরা ইউনুস: ৬৯-৭০
মহান আল্লাহ দুনিয়াকে করেছেন পরীক্ষার হলের মতো। পরীক্ষার হলে সব পরীক্ষার্থীকে উত্তর লেখার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। কেউ প্রশ্নের উত্তর ভুল লেখলেও তাকে লিখতে বাঁধা দেওয়া হয় না। তার বসার আসন ফিরিয়ে নেওয়া হয় না। পরীক্ষকরা তার সঙ্গে সদাচারণ করেন। অনুরূপভাবে দুনিয়াতে কেউ আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে, আল্লাহর অবাধ্য হলে আল্লাহ দুনিয়ার জীবন তার জন্য সঙ্কীর্ণ করে দেন না। তাকে তার ইচ্ছামতো জীবন-যাপনের অবাধ সুযোগ করে দেন। সুতরাং এটা দেখে ঘাবাড়ানোর কিছু নেই। এসব নিয়ে মনে অবান্তর প্রশ্নের জায়গা দেওয়ারও কিছু। এমন প্রশ্ন মূলতঃ শয়তানের প্ররোচণা থেকে আসে। যা থেকে বেঁচে থাকা প্রতোক মুসলমানের কর্তব্য।
লেখার শুরুতে বর্ণিত আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হলো-
ক. অবিশ্বাসীদের চাকচিক্যময় ও বিলাসী জীবন যেন মুসলমানদের প্রতারিত না করে এবং দুনিয়ার সম্পদের আশায় তারা যেন ঈমানকে না হারায় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা।
খ. মানুষের মধ্যে তুলনা করার সময় তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের বিষয়গুলোকে একইসঙ্গে বিবেচনা করা।
গ. দুনিয়ার সুখ ও প্রাচুর্য এক সময় শেষ হয়ে যাবে। তাই চিরস্থায়ী কল্যাণ ও সুখের কথা ভাবা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬
এমএ/