মসজিদে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। আর ওই নামাজ যদি মসজিদে নববীর জামাতে শামিল হয়ে আদায় করার সুযোগ হয়- তাহলে সেটা তো অতি উত্তম।
এমন ফজিলতের কারণে দেখা যায়, হজের সফরে মসজিদে নববীতে উপস্থিত হওয়ার এবং রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারকে গিয়ে সরাসরি সালাম পেশ করার সৌভাগ্য অর্জনের জন্য মদিনা মোনাওয়ারার উদ্দেশে হজ পালনকারীরা ব্যাকুল থাকেন।
নিঃসন্দেহে এটা অতি উত্তম আমল। কিন্তু হজের সময় মসজিদে নববীতে অবস্থানের জন্য ইসলামি শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো মেয়াদ নির্ধারিত নেই। অর্থাৎ এটা অপরিহার্য নয় যে, সেখানে কমপক্ষে আট দিন থাকতে হবে। আটদিন থাকলে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হিসেবে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সুযোগ হয়।
আমাদের দেশের অনেকেই মসজিদের নববীতে আট দিন অবস্থানকে এত জরুরি মনে করে যে, এর জন্য নিজেকে, সফরসঙ্গীদেরকে এবং কাফেলার আমিরকে কষ্টে ফেলে দিতেও দ্বিধা বোধ করেন না। অথচ তা শরিয়তের পক্ষ হতে নির্ধারিত কোনো মেয়াদ নয় যে, তা পূরণ করা এত জরুরি মনে করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমদ (৩/১৫৫) ও তবারানিতে (৫৪৪) একটি রেওয়ায়েত আছে, কেউ যদি এই মসজিদে (অর্থাৎ মসজিদে নববীতে) ধারাবাহিকভাবে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে তাহলে সে জাহান্নামের আজাব ও নিফাক থেকে মুক্তি পাবে।
এই রেওয়ায়েতের কারণেই সাধারণত মানুষ হজের সময় মসজিদে নববীতে আট দিন অবস্থান করাকে জরুরি মনে করে নিয়েছে। অথচ সনদের বিচারে হাদিসটি দুর্বল। উপরন্তু এই হাদিসের প্রসিদ্ধ মতন (ভাষ্য) যা তিরমিজি শরিফে রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন জামাতে তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) সঙ্গে নামাজ আদায় করে তার জন্য দুটি পরোয়ানা লেখা হয়- জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা ও নিফাক থেকে মুক্তির পরওয়ানা। -জামে তিরমিজি : ২৪১
অতএব স্পষ্টত বোঝা যায় যে, এই ফজিলত যে কোনো মসজিদে জামাতে শামিল হওয়া দ্বারা হাসিল হতে পারে।
প্রসঙ্গত বিষয়টি নিয়ে ভুল না বোঝার অনুরোধ করব। হয়তো বলবেন, ফজিলতের ক্ষেত্রে দুর্বল বর্ণনা গ্রহণযোগ্য, তা ঠিক আছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, দুর্বল বর্ণনা দ্বারা শরিয়তের কোনো বিধান প্রমাণ হয় না এবং কোনো মেয়াদ বা পরিমাণ নির্ধারিত হয় না। এজন্য সহজভাবে সেখানে আট দিন থাকার সুযোগ হয়ে গেলে ভালো, কিন্তু একে জরুরি মনে করা বা জরুরি বিধানের মতো এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া যে, কষ্ট ও পেরেশানিতে পড়ে যেতে হয় কিংবা পরস্পর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়, এসব ঠিক নয়।
প্রকৃত করণীয় হচ্ছে, হারামাইনে (মক্কা ও মদিনা) যতদিন থাকার সুযোগ হয়; থাকার চেষ্টা করবে যেন মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা হয়। মদিনায় থাকলে নবীর রওজায় বেশি বেশি সালাম পৌঁছানোর চেষ্টা করা, আর মক্কায় থাকলে ওমরা বেশি বেশি করা। সেই সঙ্গে অন্যসব নফল আমল তো রয়েছেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৬
এমএ/