ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

দোহাই আল্লাহর! শিশুদের বাঁচান

মুফতি এনায়েতুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
দোহাই আল্লাহর! শিশুদের বাঁচান ছবি: ফাইল ফটো

শিশু। শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সদা সুন্দর নিষ্পাপ মায়াবী চেহারা।

শিশুর প্রতি মায়া মমতা স্নেহ ভালোবাসা আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত। তাই তো নূন্যতম বিবেকবান মানুষ কোনো শিশুকে কাছে পেলে কোলে টেনে নিয়ে আদর করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। শিশুরা বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনের আনন্দের খোরাক।

শিশুরা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার দান। ফুলের মতো নির্মল। নির্মোহ ও নিরপরাধ। ফুল ও শিশুকে যারা ভালোবাসে না- তারা অমানুষ অথবা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।

নিজের শিশু সন্তান তো বটেই, অন্যের এমনকি প্রাণঘাতী শত্রুর শিশু হলেও তার প্রতি কেউ প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে না, যার সামান্যতম মানবতাবোধ থাকে। মানুষ তো বটে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পশুপাখিও নিজের সন্তানকে জীবনের বিনিময়ে হলেও রক্ষার চেষ্টা করে। এটাই হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম।

মায়া, মমতা, সহানুভূতি এসব গুণ মহান আল্লাহতায়ালাই দিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। তবে নানা কারণে প্রকৃতিতে যেমন বিপর্যয় দেখা দেয়, তেমনই মানুষের চিন্তা-চেতনাতেও বৈকল্য ঘটে। বিপর্যয় দেখা দেয়। বর্তমানে এমন এক বৈকল্যময় সময় অতিক্রান্ত করতে হচ্ছে আমাদের। দেশে শিশু হত্যা ও নির্যাতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পাঠকমাত্রই এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কমবেশি অবগত।

শিশুর প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ বনের হিংস্র জানোয়ারেরা করলে একটা কথা ছিল। মানুষ হয়ে এমন অমানুষের কাজ কী মেনে নেওয়া যায়? শিশুর নরম দেহকে যারা ক্ষত-বিক্ষত করছে তাদের বাড়িতে কি কোনো শিশু নেই? শিশুর প্রতি কারও মনে যদি ভালোবাসার উদয় না হয় তাহলে তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করাই ভালো।

শিশু হত্যার নানাবিধ নিষ্ঠুর ও নির্মম কর্মকাণ্ড আমাদের সমাজে ঘটছে প্রায়শ। চোর, ছিনতাইকারী সন্দেহেও শিশু-কিশোরদের ওপর এক শ্রেণির বিবেকহীন মানুষ অত্যাচার করছে। সামাজিক অস্থিরতা ও অভাব-অনটনের কারণে শিশু-কিশোরদের কেউ কেউ ছিঁচকে চুরির মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই বলে সন্দেহ হওয়া মাত্রই বিচার-বিবেচনা না করে কোনো শিশু-কিশোরের ওপর চড়াও হয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো ঘটনাকে স্বাভাবিক বলা যাবে না কোনো বিচারেই।

শহরের বাসাবাড়িতে কাজের শিশু-কিশোরদের ওপর সামান্য কারণে চালানো হয় বর্বর অত্যাচার। কোনো কোনো মেয়ে শিশুর ওপর চলে যৌন নির্যাতন। এমনকি অনেককে বাবা-মা বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয় না দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। অথচ শিশু-কিশোরদের দিয়ে কাজ করানোই বেআইনি। কিন্তু আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোররা বাসাবাড়ি, কলকারখানা, গ্যারেজ প্রভৃতিতে কাজ করতে বাধ্য হয়। এদের স্বাভাবিক জীবন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনই অসুখ-বিসুখে সুচিকিৎসার ন্যূনতম ব্যবস্থাও থাকে না। এমনকি অনেককে পর্যাপ্ত খাবারও দেয়া হয় না বাসাবাড়ি, কলকারখানা বা গ্যারেজে। অথচ সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তাদের খাটিয়ে নেওয়া হয় একনাগাড়ে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু-কিশোর শ্রমিকদের নিয়ে প্রায়শ কথা ওঠে। সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় এদের পক্ষে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন হয় না। শিশু-কিশোরদের অধিকার নিয়ে জাতিসংঘেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশসহ সদস্যদেশগুলো স্বাক্ষরও করেছে। এরপরও শিশু-কিশোরদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমনটি বলা মুশকিল। আমরা মনে করি, শিশু-কিশোরদের কল্যাণে জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্তের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি।

সম্প্রতি ঢাকার বনশ্রীতে এক মা কর্তৃক দুই শিশু হত্যার যে লোমহর্ষক ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে; তা শুধু ভয়াবহই নয়, অমানবিক ও ব্যতিক্রমও। একজন উচ্চশিক্ষিত মা, যিনি কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন, এ কাজ করতে পারেন তা অবিশ্বাস্য ঠেকছে। দ্বিধা ও সংশয়ের মধ্য দিয়ে অনেকেই বলছেন, এটাও কী সম্ভব!

বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।