আজ স্বাধীনতা দিবস। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আর কোটি মানুষের সহযোগিতা ও হৃদয়ের আকুল প্রার্থনায় দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা এ দেশকে স্বাধীন করেছে।
যারা দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, জাতিকে হেফাজতের জন্য নিজের জান কোরবান করেছেন তারা শহীদ। মহান আল্লাহতায়ালা তাদের সঙ্গে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সবুজ পাখির বেশে তারা জান্নাতের বাগানে উড়ে বেড়াবেন। আরশের নিচে তারা আনন্দের জীবনযাপন করবেন। হাশরের আগ পর্যন্ত তারা সেখানেই থাকবেন। সেখানে তারা আল্লাহতায়ালার কাছে আবার দুনিয়াতে এসে বার বার শহীদ হওয়ার জন্য আবেদন জানাবেন।
এ সম্পর্কে এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. বলেন, শহীদদের আত্মা সবুজ বর্ণের পাখির অভ্যন্তরে অবস্থান করবে। আরশের ঝুলন্ত ফানুসে ওইগুলো থাকবে, সেখান থেকে জান্নাতের যত্রতত্র উড়ে বেড়াবে, অত:পর আবার এ ফানুসে ফিরে আসবে। এমতাবস্থায় তাদের প্রতিপালক তাদের সম্মুখে বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়ে বলবেন, তোমরা কিসের বাসনা রাখ? তারা বলবে, আর কিসের আকাঙ্খা করব? জান্নাতের যত্রতত্র যথেচ্ছাভাবে ভ্রমণ করছি। এভাবে তিনি তাদেরকে তিন বার জিজ্ঞেস করবেন, তারাও অনুরূপ উত্তর দেবে। তারা যখন বুঝতে সক্ষম হবে যে, তাদেরকে কিছু না কিছু প্রার্থনা করতেই হবে, তখন তারা বলবে, আমাদের বসনা যে, তুমি আমাদের রুহকে আমাদের পার্থিব দেহে ফিরিয়ে দাও, যাতে পুনরায় আমরা তোমার রাস্তায় শহীদ হতে পারি। এদের আর কোনো আকাঙ্খা নেই প্রকাশ পাওয়ায় তাদেরকে ওই অবস্থায় থাকতে দেওয়া হবে। -সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ১২১, আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং ২৫২০
নিজেদের মাল-সম্পদ ও নিজ পরিবারের ইজ্জত আব্রুর হেফাজতের জন্য শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে যারা নিহত হয় তাদেরকেও শহীদ বলা হয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, যে নিজ সম্পদের হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হলো- সে শহীদ এবং যে নিজ পরিবারকে হেফাজত করতে যেয়ে নিহত হলো- সে শহীদ। -আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭৭২
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি কোনো লোক এসে আমার মাল নিয়ে নিতে চায় তাহলে আমি কী করবো? রাসূল (সা.) বলেন, তুমি দিবে না। আগুন্তুক বলল, যদি সে আমার সঙ্গে লড়াই করে? রাসূল (সা.) বললেন, তুমিও তার সঙ্গে লড়াই করবে। আগুন্তুক বলল, সে যদি আমাকে হত্যা করে দেয় তাহলে? রাসূল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি শহীদ। আগুন্তুক বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসূল (সা.) বললেন, সে জাহান্নামি । -সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ২২৪
মুসলিম সালাতানাতের নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দেওয়া ও আল্লাহর ভয়ে রাত জেগে ইবাদতের বিশেষ ফজিলত বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ হিসেবে তার সীমান্ত পাহরা দিলেও সে বিশেষ ফজিলতের অধিকারী হবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে বাংলার ঘুমন্ত মানুষের জান-মালের ওপর হামলা করা হয়েছিল। তখন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শত্রুর হামলাকে প্রতিহত করতে যেয়ে যারা ইন্তেকাল করেছেন- তারা শহীদ।
পাকিস্তানিরা এ দেশের মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের ওপর হামলা করেছিল, মানুষের কোনো নিরাপত্তা ছিলো না, নিরাপত্তা ছিলো না ইজ্জত-আব্রুর। যখন-তখন যে কোনো বাড়িতে তারা হামলা করেছে, মানুষের জান-মালতো ছিনিয়ে নিয়েছেই- এমনকি নারীদের প্রতিও হাত বাড়াতে বাকি রাখেনি। এসব জালেমদের কবল থেকে দেশকে নিরাপদ রাখতে যারা যুদ্ধ করেছেন- সেসব মুক্তি সেনারা বীর মুজাহিদ। আর যারা নিহত হয়েছে তারা শহীদ। আল্লাহতায়ালার কাছে কামনা করি, তিনি যেন তাদের শাহাদাতকে কবুল করেন এবং তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতাকে কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুন্ন রাখেন। আর আমাদের প্রাণের জন্মভূমিকে সকল প্রকার শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেন। আমিন।
লেখক: প্রিন্সিপাল ও মুহাদ্দিস, জামিআ রশীদিয়া এনায়েতুল উলুম, দক্ষিনখান, ঢাকা
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ২৬ মার্চ ২০১৬
এমএ/