মানুষের অন্যতম শখের বিষয়গুলোর মধ্যে পর্যটন অন্যতম। বেড়াতে যাওয়ার প্রতি স্বভাবজাতভাবেই আগ্রহের মাত্রা থাকে একটু বেশি।
ইসলামের দৃষ্টিতে পর্যটন নিছক বিনোদনের উপাদন নয়। বরং ইসলাম পর্যটনকে দিয়েছে আরও বড় মর্যাদা। ইসলাম পর্যটনকে গ্রহণ করেছে মুক্ত জ্ঞানার্জন ও চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানব সৃষ্টির সত্যিকার স্বার্থকতা ও সফলতা হলো মানুষ নিজ স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার পরিচয় লাভ করবে। আল্লাহর বড়ত্বকে হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করবে। সর্বোপরি আল্লাহতায়ালাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসবে ও মান্য করবে।
আল্লাহর পরিচয় লাভের সহজ উপায় হলো- গভীর চিন্তাশীলতার সঙ্গে পৃথিবীতে বিচরণ করা। আকাশ, মাটি ও পানির মাঝে ছড়িয়ে থাকা অগণিত প্রাকৃতিক কুদরত স্বচোখে দেখে মানুষের মন অবচেতনভাবেই অাল্লাহর প্রতি বিনম্র হয়ে পড়ে। ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালার’ প্রকৃতি অধ্যয়ন করে আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতার যে পরিচয় হৃদয় থেকে উপলব্ধি করা যায়- তা চার দেয়ালের পাঠশালা কিংবা পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন করে সম্ভব হয় না। তাই তো মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা তার পবিত্র কালামে ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা বিশ্বে ভ্রমণ করো। প্রত্যক্ষ করো, আল্লাহ কিভাবে এ সৃষ্টিজগতকে সৃজন করেছেন। এবং কিভাবে আবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু করার সামর্থ্য রাখেন। -সূরা আনকাবুত : ২০
অনেক মানুষ সম্পদে, প্রযুক্তিতে, জনবলে সমৃদ্ধি অর্জন করে অহংকারী হয়ে যায়। ঔদ্ধত্যের চরম সীমায় পৌঁছে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা বেমালুম ভুলে যায়। স্রষ্টার দেওয়া সীমা লংঘন করতে থাকে। নির্যাতন, অবিচার, জুলুম, ব্যাভিচারসহ বিভিন্ন অশ্লীল, গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। স্রষ্টার কাছে জবাবদিহীতার কথা ভুলে যায়। বারংবার সতর্ক করার পরও যখন তারা সতর্ক হয় না, ইনসাফপূর্ণ শালীন জীবনব্যবস্থায় ফিরে আসে না- তখন আল্লাহতায়ালা তাদের নানাভাবে ধ্বংস করে দেন। আদ, সামুদ, কওমে লুতসহ খোদায়ী শাস্তিপ্রাপ্ত এমন অনেক জাতি পৃথিবীতে অতীত হয়েছে। ওই সব সম্প্রদায়ের এলাকার ধ্বংসাবশেষ এখনও অবশিষ্ট আছে।
পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহর গজবে নিপতিত এ সব এলাকা সফর করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। জুলুম ও অশ্লীলতার সীমা লংঘন করলে পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে- তা প্রত্যক্ষ করতে আদেশ করা হয়েছে। এ সব এলাকা ভ্রমণ করে আল্লাহর গজবের কথা স্মরণ করলে মানুষ শালীন হবে, বিনয়ী হবে, স্রষ্টার অনুগত হবে। এ প্রসঙ্গে সূরা আনআমের ৬ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। মিথ্যাবাদীদের পরিণতি প্রত্যক্ষ করো। ’ আর সূরা নামালের ৬৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। পাপীদের পরিণতি প্রত্যক্ষ করো। ’ সূরা রুমের ৪২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণতি প্রত্যক্ষ করো। যাদের অধিকাংশই ছিলো মুশরিক। ’
ইসলাম পর্যটনকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সত্য। কিন্তু ইসলাম কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়িকে পছন্দ করে না। সীমালংঘনের অনুমতি দেয় না। বর্তমান পৃথিবীর অনেক দেশ পর্যটন শিল্পকে রেমিটেন্সের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে। রেমিটেন্সকে বেশি গুরুত্ব দিতে যেয়ে নীতি-নৈতিকতা ও শালীনতার অনেক প্রাচীর অনায়েসে অতিক্রম হচ্ছে। ইসলামি স্কলাররা বিষয়টিকে ভবিষ্যতের জন্য শুভ ও কল্যাণকর বলে মনে করেন না।
ইসলাম নিষিদ্ধ কোনো বিষয়কে প্রশ্রয় দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মানসিকতা ইসলামের মানদণ্ডে গৌরবের নয়। দেশে যদি প্রাকৃতিক নৈসর্গ থাকে- পর্যটকরা এমনিতেই আসবে। প্রকৃতির প্রেমই তাদের টেনে আনবে। অনৈতিক কিছু না থাকলেও তারা আসবে। দরকার শুধু পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিশ্চিত করা। পর্যটনের স্থানগুলোতে পানাহার ও বিশ্রামের মানসম্পন্ন ব্যবস্থা করা।
পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা সাবার ১৮ নং আয়াতে পর্যটন শিল্পের এ দু’টি বিষয়ের দিকে ইশারা করা হয়েছে। যেমন- সাবা সম্প্র্রদায়ের ওপর নিজের অনুগ্রহের বিবরণ দিতে যেয়ে মহান আল্লাহ তাদের বাণিজ্যিক সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দু’টি অনুগ্রহের কারণে তারা বহুদূরের শাম দেশে যেতে পারত এবং সফল ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ রাখত। প্রথমতঃ আল্লাহ তাদের পথ নিরাপদ করে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়তঃ যাত্রাপথে তাদের দুপুর ও রাতের বিশ্রামের জন্য দুপুর ও রাতের প্রতিটি দূরত্ব অন্তর অন্তর পথের পাশেই জনপদ তৈরি করে রেখেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
এমএ/