ইরানের কোম শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরবর্তী ইসার নামক এলাকার পাশে সাদা রঙের পর্বত ‘কুহে খিজির’। বলা হয়, খিজির পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত একটি গুহায় ৩ হাজার বছর আগে হজরত খিজির আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেদিতে মশগুল থাকতেন।
পরবতীর্তে ওই গুহার জায়গায় একটি মসজিদ নিমার্ণ করা রয়েছে। প্রথমে গুহাটিকে মেহরাব বানিয়ে সেখানে ছোট্ট আকারের মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পরে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়।
পুরুষদের পাশে মেহরাব রেখে মসজিদের মাঝ বরাবর দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। যার ডানপাশে মহিলারা নামাজ পড়েন আর বামপাশে পুরুষরা। মসজিদের বামপাশে ও মেহরাবের বিপরীত দিকে বারান্দা রয়েছে। রয়েছে মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা টয়লেট ও ওজুর ব্যবস্থা।
পর্বতের একপাশে কেবল কার সংযুক্ত করা। যার সাহায্যে নিচ থেকে ওপরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা হয়।
ভ্রমণকারীদের কুহে খিজিরে যাওয়ার সুবিধার্থে কোম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ- শহর থেকে পর্বতের পাদদেশ পর্যন্ত পাকা রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। পর্বতের পাদদেশে রয়েছে কয়েকজন নাম না জানা শহীদের কবর। সেখান থেকে চূড়ায় অবস্থিত মসজিদে যেতে ৩০০টির বেশি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়। পর্বতের চূড়া থেকে পুরো কোম শহর দেখা যায়।
হজরত খিজির আলাইহিস সালাম আল্লাহর নেককার বান্দা নাকি নবী ছিলেন, সে বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ইতিহাসে দু’জন খিজিরের কথা পাওয়া যায়। একজন হজরত নুহ আলাইহিস সালামের ছেলে সামের সন্তান, অন্যজন বনী ইসরাইলের নবী ছিলেন।
তাদের একজনের সঙ্গে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সাক্ষাত, ভ্রমণ ও কথোপকথন হয়েছিল। যা সূরা কাহাফে বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে কারিমে তাকে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বন্ধু বা শিক্ষক হিসেবে তাকে পরিচিত করানো হয়েছে। তিনি ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে বিশেষ অবস্থানে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেলো, যাকে আমি নিজের অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম৷’ -সূরা কাহাফ : ৬৫
তবে হজরত খিজির (আ.)-এর নাম কোরআনে কারিমে সরাসরি না আসলেও বিভিন্ন বর্ণনায় তাকে খিজির বলে পরিচিত করানো হয়েছে। ঐতিহাসিক গবেষকদের মতে তার আসল নাম ‘তালিয়ান বিন মালকান বিন আমের বিন আর ফাখসাদ বিন সাম বিন নুহ। ’ তিনি শুষ্ক মাটির যেখানে বসতেন, সে জায়গা সবুজ হয়ে যেত। এজন্য তাকে ‘খিজির’ বলা হয়। খিজির শব্দের বাংলা হলো- ‘সবুজ’।
হজরত খিজির (আ.) সম্পর্কে মানুষের মাঝে প্রচুর মিথ প্রচলিত আছে। তিনি হজরত মুসা (আ.)-এর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে তিনি আদম সন্তানের মাঝে সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ। বলা হয়, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন।
পর্যটকদের কাছে পরিচিত হওয়ার আগে কুহে খিজির আধ্যাত্মিক সাধকদের ইবাদতের স্থান ছিল। সেখানে তারা ইবাদত-সাধনা করতেন। হাল সময়ে কুহে খিজির ইরানের আকর্ষণীয় এক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ এখানে আসেন। তবে ছুটির দিনগুলোতে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
মুসলিম জিয়ারতকারীরা এ মসজিদে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইরান
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
এমএ/