ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

যে ক্বারীদের কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ বিশ্ববাসী

আব্দুল মতিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৬
যে ক্বারীদের কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ বিশ্ববাসী

পৃথিবীর বুকে মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে কোরআনে কারিম। কোরআন তেলাওয়াত শোনার মানে হলো শ্রেষ্ঠ বাণী শোনা।

কোরআন হচ্ছে কাওসারের পানির মতো স্বচ্ছ ঝর্নাধারা। কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত আলাদা ইবাদত বিশেষ। তবে কোরআন তেলাওয়াতই উম্মতের জন্য চূড়ান্ত লক্ষ্য নয় বরং তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা। ক্বারি হিসেবে খ্যাতি লাভ করার উদ্দেশ্যে কোরআন তেলাওয়াত করা ঠিক নয়। দুনিয়াবি স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যেও কোরআন তেলাওয়াত নয়। এমন তেলাওয়াতে কোনোরকম কল্যাণ নেই। কোরআন তেলাওয়াতের শিষ্টতাপূর্ণ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। এগুলোর কোনোটা বাহ্যিক আবার কোনো কোনোটা অভ্যন্তরীণ।

তেলাওয়াতের সব শর্ত অক্ষুন্ন রেখে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিশ্বে বিখ্যাত হয়েছেন অনেকেই। সে সব বিখ্যাত ক্বারীদের কয়েকজন হলেন-

আবদুর রহমান আস সুদাইস: শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আযিয বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আস সুদাইস। তিনি মক্কার মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম ও খতিব। সৌদি আরবের রাজধানী বিয়াদে ১৩৮২ হিজরি সালে জন্মগ্রহণকারী সুদাইস ১৯৯৫ উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামি শরিয়া বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।

আহমদ বিন আলি আল আজমি: শায়খ আহমদ আলি মুহাম্মদ আলু সোলায়মান আল আজমি। ১৯৬৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া এই ক্বারী ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।

আবদুল বাসেত: শায়খ আবদুল বাসেত বিন মুহাম্মদ বিন আবদুস সামাদ বিন সালিম। মিসরের দক্ষিণে অবস্থিত ক্বিনা জেলায় ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ নেওয়া এই ক্বারী বিশ্বে একজন খ্যাতিমান ক্বারী হিসেবে পরিচিত। এ বরেণ্য ক্বারী ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ববাসীর সামনে কোরআন তেলাওয়াতকে তিনি ভিন্ন ধারায় উপস্থাপন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

মাহির আল মুআইক্বিলি: মাহির হামদ মুআইক্বিল আল মুআইক্বিলি। তিনি হাফস বিন আছিমের অনুকরণে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। সৌদি আরবের মক্কায় ১৩৮৮ হিজরি সালে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত এই ক্বারী ১৪২৯ হিজরি সাল থেকে মসজিদে হারামে ইমামতির দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল-এর ফিকহের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

মিশারি আল আফাসি: মিশারি বিন রাশিদ বিন গারিব বিন মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল আফাসি আল মুতায়ারি। তিনি একাধারে ক্বারী ও ইসলামি গানের শিল্পী। ১৯৭৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বের মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাফসির বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন কারী এই ক্বারী আবু রশিদ নামে বেশি পরিচিত।

মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি: মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি ১৯২০ সালে মিশরের সূহাজ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৮ বছর বয়সে কোরআনে কারিম মুখস্ত করে চমক সৃষ্টি করেন। কোরআন তেলাওয়াতে সুমিষ্ট সুরের কারণে বিশ্বে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে এই ক্বারীর। তিনি ১৯৬৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

সাদ আল গমিদি: শায়খ সাদ আল গমিদি ১৩৮৭ হিজরি সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম ও ইমাম। ভিন্ন ধাঁচে ও কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য খ্যাতি অর্জনকারী এই ক্বারী ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া অনুষদ থেকে ডিগ্রী অর্জনের পাশাপাশি ‘উসূলুদ দ্দীন’ বিষয়ে বিশেষ ডিগ্রী লাভ করেন।

ইদরিস আবকার: ইদরিস বিন মুহাম্মদ আবকর ১৩৯৫ হিজরি সালে জেদ্দায় জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে তিনি মসজিদুত তাওহিদে কোরআন শিক্ষা শুরু করেন। আর কোরআন হেফজ করেন মসজিদ জামে আল ফাত্তানি থেকে। জেদ্দার বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদে ইমামতি করার পর বর্তমানে তিনি আবু ধাবীর শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন।
 
ফারিস আব্বাদ: শায়খ ফারিস আবদ রব্বিহি মুহাম্মদ আব্বাদ। ১৯৮০ সালে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কোরআন তেলাওয়াতে মর্মস্পর্শী আওয়াজের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে সৌদি আরবের ঐতিহাসিক মসজিদ ‘মসজিদে আলি ইবনে আবি তালেব’-এ সহযোগী ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইয়াসির আদ দূসরি: ইয়াসির বিন রশিদ আদ-দূসরি। সৌদি আরবের খারজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া অনুষদ থেকে অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

সউদ আশ-শারীম: শাইখ সউদ বিন ইবরাহীম বিন মুহাম্মদ আলে শারীম, ১৩৮৬ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সৌদি আরবের বাদশা কর্তৃক ১৪১২ হিজরী সালে আল-মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতীব হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আজ পর্যন্ত কর্মরত আছেন।

মুহাম্মদ জিবরীল: মুহাম্মদ মুহাম্মদ সাইয়্যিদ হুসাইন জিবরীল, মিশরের বিখ্যাত ক্বারী। ৯ বছর বয়সের পূর্বে আল-কুরআন মুখস্ত করেন। তিনি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও শরিয়া বিষয়ে লিসান্স ডিগ্রী লাভ করেন।

শিরজাদ আবদুর রহমান তাহির: শিরজাদ বিন আবদুর রহমান বিন তাহির বিন হাসান আল কূফি আল-কুরদি আশ শাফিঈ। তিনি ১৯৬৮ সালে ইরাকের উত্তরের শহর মসুলে জন্মগ্রহণ করেন। মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে বর্তমানে দুবাইয়ের মুহাম্মদ হাসান আশ শায়খ মসজিদে ইমাম হিসেবে কর্মরত। তার তেলাওয়াতও হৃদয়গ্রাহী।

সলাহ আল বাদির: সলাহ বিন মুহাম্মদ আল-বাদির সৌদি আরবের বিখ্যাত একজর ক্বারী। ১৯৭০ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া অনুষদ থেকে অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন। আইনশাস্ত্রেও রয়েছে তার উচ্চতর ডিগ্রী। তিনি মসজিদে হারামের সাবেক ইমাম। বর্তমানে মদিনার মসজিদে নববীতে ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মদিনার হাইকোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
 
তাওফিক আস-সয়িগ: তাওফিক বিন সাঈদ আস-সয়িগ। আফ্রিকা মহাদেশের ইরিত্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মক্কার উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। মনোমুগ্ধকর আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য মুসলিম বিশ্বে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।

ইয়াসির আল ফিলকাবি: ইয়াসির আহমদ নাসির আল ফিলকাবি। কুয়েতের বিখ্যাত ক্বারী ও ইমাম। তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত।

বস্তুত কোরআনে কারিম মানবজাতির পথপ্রদর্শক, সামগ্রিক জীবন পরিচালনার সংবিধান। পবিত্র কোরআনে কারিমের পাঠ, আমল ও শ্রবণই পারে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে । তাই আসুন, বেশি বেশি কোরআন পড়ি, কোরআনের আলো সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।