১৯৪১ সাল। পবিত্র ভূমি মক্কা নগরীর আকাশে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দূর্যোগের ঘনঘটা।
পানি সরানোর জন্য নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। জলাবদ্ধতার প্রকোপে তলিয়ে গেল কাবাঘরের মাতাফসহ মক্কার বেশ কিছু এলাকা। আর এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলেন বাহরাইনের ১২ বছরের কিশোর শেখ আল ওয়াদি।
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ ওয়াদি বলেন, আমি সে সময় মক্কায় পড়ালেখা করতাম। এখানেই থাকতাম। প্রায় এক সপ্তাহ বৃষ্টিপাত হলো। মক্কায় এতবৃষ্টি আগে কেউ দেখেনি। দিনরাত অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে মক্কার অধিকাংশ এলাকা। কাবার মাতাফ এবং হারাম চত্বরে পানি থৈ থৈ করছে। ভূমি থেকে কাবার দরজা ৭ ফুট উঁচুতে। আর মাত্র ১ ফুট বাকি কাবা ঘরে পানি প্রবেশ করতে। মাতাফে জমেছে ৬ ফুট পানি।
ওয়াদি বলেন, আমি দেখলাম পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে মানুষ, গাড়ি এবং অনেক প্রাণী। এক সপ্তাহ পর বৃষ্টি কমলো। আমার ছোট ভাই হানিফ ও তার দু’বন্ধুকে (মুহাম্মদ আল তাইব এবং ইয়েমেনের হাশিম আল বার) নিয়ে বের হলাম মক্কার অবস্থা দেখতে। আমার শিক্ষক তিউনিশিয়ার আবদুর রউফও আছেন আমাদের সঙ্গে। তরুণ বয়স। ভালোই লাগছিল মক্কার এমন দৃশ্য।
ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম মাতাফে (তাওয়াফের জায়গায়) পানি জমে আছে। সাতারু হিসেবে আমি বেশ ভালো। তাই আমার মাথায় এলো সাঁতরে তাওয়াফ করার চিন্তা। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম এবং বিষয়টি বন্ধুদের বললাম। ওরাও রাজি হলো।
মাতাফে নেমে সাঁতার শুরু করলাম। পুলিশ প্রথমে আমাদের বাঁধা দিলো। তাদের সন্দেহ ছিলো- আমরা হয়তো হাজরে আসওয়াদ চুরি করতে এসেছি, কিংবা কোনো ক্ষতি করতে চাই। আমরা পুলিশকে আসল উদ্দেশ্যের কথা বললাম। তারা আমাদের তাওয়াফের অনুমতি দিলো। তাওয়াফ শুরু করলাম। বন্ধুরা সাঁতারে আমার মতো দক্ষ ছিলো না। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা তাওয়াফ শেষ করতে পারেনি। আল্লাহর রহমতে আমি তাওয়াফ শেষ করি।
তাওয়াফ শুরুর আগে আমার আনন্দ এবং ভয় দু’টোই একসঙ্গে কাজ করছিল। আনন্দ লাগছিল এ জন্য যে, এমন সুযোগ হয়তো জীবনে আর আসবে না। আর ভয় হচ্ছিল এ জন্য যে, পুলিশ আবার বাঁধা দেয় কী-না।
আল ওয়াদি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে আমার পুত্র আবদুল মজিদ তার স্ত্রীকে নিয়ে হজে যায়। সেবার সৌদির একটি ম্যাগাজিনে আমার তাওয়াফ করার ওই ছবিটি ছাপিয়েছিলো। ছবিটি দেখে ওরা আমাকে চিনতে পারে এবং ম্যাগাজিনের একটি কপি কিনে নিয়ে আসে।
আল ওয়াদি এখন অবশ্য আর বেঁচে নেই। ২০১৫ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
-সৌদি গেজেট অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এমএইউ/