কসর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- কম করা, কমানো।
আল্লাহতায়ালা এই সংক্ষেপ করার মাঝে কল্যাণ রেখেছেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই। ’ -সূরা আন নিসা: ১০
বাসস্থান থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থান কিংবা এরও বেশি দূরত্বে যাওয়ার নিয়তে রওয়ানা হয়ে নিজ এলাকা, গ্রাম বা শহর অতিক্রম করার পর থেকেই সফরের বিধান আরোপিত হবে। এ সময় সফরকারীকে মুসাফির বলে গণ্য করা হবে।
মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় কোনো মুকিম (স্থানীয়) ইমামের পেছনে নামাজের নিয়ত না করলে তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়া জরুরি। এটাকে কসরের নামাজ বলে। এটা ইসলামের নির্দেশ।
মুসাফিরের জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ একাকী পড়লে বা মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে কসর করা জরুরি। এক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ পড়া ঠিক নয়।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের নবীর জবানে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন। ’ -সহিহ মুসলিম: ৬৮৭
আর মুকিম অর্থাৎ ভ্রমণরত এলাকার স্থানীয় ইমামের পেছনে নামাজের নিয়ত করলে পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয় তবে সে তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮৪৯
সফর অবস্থায় নামাজ কসর করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এ সব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন। সফর অবস্থায় তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামায পূর্ণ পড়েছেন এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
আর মাগরিব, বেতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজেরও কসর হয় না। তাই সুন্নত পড়লে পুরোই পড়বে।
প্রকাশ থাকে যে, সফর অবস্থায় পথিমধ্যে তাড়াহুড়া ও ব্যস্ততার সময় সুন্নত পড়বে না। আর গন্তব্যে পৌঁছার পর সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম।
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সফর অবস্থায় সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার ন্যায় আবশ্যক থাকে না; বরং সাধারণ সুন্নতের হুকুমে হয়ে যায়।
পূর্ণ নামাজের স্থলে অর্ধেক পড়ার মধ্যে কারও কারও মনে এরূপ ধারণা হকে পারে যে, নামাজ বোধহয় পূর্ণ হলো না- এটা ঠিক নয়। কারণ কসরও শরিয়তের নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে গোনাহ হয় না; বরং সওয়াব হয়। সুতরাং চিন্তার কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
এমএইউ/