ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

প্রশান্ত মহাসাগরের নিভৃত দ্বীপেও জ্বলছে ইসলামের অালো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
প্রশান্ত মহাসাগরের নিভৃত দ্বীপেও জ্বলছে ইসলামের অালো পাপুয়া নিউগিনির একটি মসজিদ

প্রশান্ত মহাসাগর, পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর। প্রশান্ত মহাসাগরে রয়েছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নৌ রুট ও বন্দর। বন্দরগুলোর মধ্যে সিডনি হারবার, সাংহাই, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, সানফ্রান্সিসকো ও লস অ্যাঞ্জেলেস অন্যতম।

প্রশান্ত মহাসাগর, পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর। প্রশান্ত মহাসাগরে রয়েছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নৌ রুট ও বন্দর।

বন্দরগুলোর মধ্যে সিডনি হারবার, সাংহাই, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, সানফ্রান্সিসকো ও লস অ্যাঞ্জেলেস অন্যতম। প্রশান্ত মহাসাগরে মোট দ্বীপের সংখ্যা বাকি চারটি মহাসাগরের সম্মিলিত দ্বীপের সংখ্যার চেয়ে বেশি।  

পলিনেশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভেসে থাকা ছোট ছোট অনেকগুলো দ্বীপকে একসঙ্গে এই নামে ডাকা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় মাঝখানে ১৩০টির মতো দ্বীপ নিয়ে পলিনেশিয়া অঞ্চল গঠিত।

পলিনেশিয়া, মেলোনেশিয়া আর মাইক্রোনেশিয়া; প্রশান্ত মহাসাগরের এই তিন অঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিয়ে ওশেনিয়া বা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ।  
টোঙ্গার একটি মসজিদে কোরআন শিখতে আসা শিক্ষার্থীদের একাংশ
পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া ও মেলোনেশিয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব দ্বীপের অনেকগুলোতেই মানব বসতি নেই। যেগুলোতে আছে সেগুলোতেও মিশ্র সংস্কৃতির মানুষ‍। সেখানে মুসলমানদের উপস্থিতি বিস্ময়কর, ছোট ছোট এসব দ্বীপে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ।

পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া আর মেলোনেশিয়ায় ইসলামের আগমন প্রায় ৪০০ বছর আগে। ১৬০০ শতকে নিউগিনি (বর্তমানে পাপুয়া নিউগিনি) থেকেই মূলত ইসলামের প্রসার হয় এসব ক্ষুদ্র দ্বীপে।

পাপুয়া নিউগিনি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সীমানাঘেঁষা ওশেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি বড় ধরনের দ্বীপরাষ্ট্র। প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় সেখানে ইসলামের আলো পৌঁছে খুব সহজেই। আর সেখান থেকেই মূলত পলিনেশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়ে।

পলিনেশিয়ার নিভৃত এসব দ্বীপে মুসলমানরা বাস করে আসছেন শত শত বছর ধরে। যদিও বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা। আন্তর্জাতিক সাইটগুলোতে ব্যাপক ঘাটাঘাটি করেও পলিনেশিয়ান মুসলমানদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে এটা জানা গেছে যে, ইতিহাস থেকে মুসলমানদের নাম মুছে ফেলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফরাসিরা যখন পলিনেশিয়ার দ্বীপগুলো দখল করে নেয় তখন মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। তবুও প্রশান্ত মহাসাগরের পলিনেশিয়া, মেলোনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া তথা গোটা ওশেনিয়া মহাদেশেই ইসলাম একটি বর্ধনশীল ধর্ম।

নিউগিনির মুসলিম ব্যবসায়ীরা যখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য করতেন তখন মূলত তারা এসব ক্ষুদ্র দ্বীপে ইসলামের প্রসার ঘটান।

উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরের এই বেল্টে ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ওশেনিয়া মহাদেশ অবস্থিত। ১৮৭৯ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ফিজিতে মুসলিমদেরকে শ্রমিক হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।
টোঙ্গার মুসলমানরা একটি দাতব্য সংস্থার আয়োজনে
সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, পুরো ওশেনিয়া মহাদেশে প্রায় ৭ লাখের মতো মুসলমানের বসবাস। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ৪ লাখ, নিউজিল্যান্ডে ৫০ হাজার, ফিজিতে ৬০ হাজার, নিউ ক্যালিডোনিয়াতে ১০ হাজার, পাপুয়া নিউগিনিতে ৩ হাজার এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, কিরিবাতি, সামোয়া ও টোঙ্গায় অল্পসংখ্যক মুসলমান রয়েছেন।  

‘প্যাসিফিক ম্যাগাজিন’ নামের একটি সাময়িকী ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওশেনিয়ায় এখন দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ওশেনিয়ায় ইসলামের এই প্রসারকে ‘গ্রিন মুন রাইজিং’ নামে অভিহিত  করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

সেখানে বলা হয়েছে, ভানুয়াতু, ফিজি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, পাপুয়া নিউগিনি ও নিউ ক্যালিডোনিয়ায় ইসলাম খুব দ্রুত প্রসার পাচ্ছে। মেলোনেশিয়ার দ্বীপগুলোতে কয়েক হাজার মুসলমান রয়েছেন, যারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের, তারা একসময় প্রকৃতি পূজা করতেন।

এ ছাড়া পলিনেশিয়ার স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র পালাউয়ে ৫০০ মুসলমান অধিবাসী রয়েছেন। সেখানে মার্কিন কুখ্যাত কারাগার গুয়ানতানামো বে থেকে কিছু মুসলমানকে পালাউয়ে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। এসব মুসলমান চীনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সম্প্রদায়ের।

তাছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় মার্কিন মালিকানাধীন দ্বীপ মার্শাল আইল্যান্ডসে ১০ জন মুসলমান বাস করেন। ক্ষুদ্র দ্বীপ নাউরুতে ১৯৪৭ সালে ১৪৭৬ জন অধিবাসীর মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন মুসলিম। অথচ, ২০০২ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- ১০ হাজারেরও বেশি অধিবাসীর মধ্যে একজনও মুসলমান নেই।

পলিনেশিয়ার কুক আইল্যান্ডে ৬ জন মুসলমানের বাস। আমেরিকান সামোয়াতে ১৯৯০ সালের হিসেব অনুযায়ী ১২ জন মুসলমানের বাস ছিল দ্বীপটিতে।

-অন ইসলাম অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।