ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নামাজে একাগ্রতা অর্জন ও মনোযোগ বাড়ানোর আমল

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
নামাজে একাগ্রতা অর্জন ও মনোযোগ বাড়ানোর আমল ছবি: সংগৃহীত

নামাজে একাগ্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোরআন-হাদিসে এ সম্পর্কে অনেক তাগিদ করা হয়েছে। একাগ্রতার দু’টি অংশ রয়েছে- এক. নামাজে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা। দুই. মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা। 

নামাজে একাগ্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোরআন-হাদিসে এ সম্পর্কে অনেক তাগিদ করা হয়েছে।

একাগ্রতার দু’টি অংশ রয়েছে-

এক. নামাজে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা।
দুই. মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা।  

এ দু’টি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে একাগ্রতাযুক্ত নামাজ বলে। এ দু’টি বৈশিষ্ট্য অর্জন করার বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন-

এক. বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা। যেমন হাত, পা এবং শরীরকে নামাজের বাইরের কোনো কাজে ব্যবহার না করা। অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত থাকা। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের নবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সাতটি (অঙ্গের) ওপর সিজদা করে এবং নামাজে চুল বা কাপড় না গুটায়। -সুনানে আবু দাউদ: ২/১৪

নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, বিখ্যাত তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) যখন নামাজে দাঁড়াতেন তখন মনে হত একটি কাঠ মাটিতে গেড়ে দেওয়া হয়েছে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৭৩২২

প্রখ্যাত তাবেয়ি আমাশ (রহ.) থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) যখন নামাজে দাঁড়াতেন তাকে দেখে মনে হত যেন একটি পড়ে থাকা কাপড়। -মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: ৩৩০৩

তদ্রূপ এদিক সেদিক না তাকানো; নামাজ অবস্থায় যখন যেখানে যেখানে দৃষ্টি রাখার নিয়ম সেখানে দৃষ্টি রাখাও বাহ্যিক একাগ্রতার অন্তর্ভুক্ত।

হজরত আযয়েশা (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে। -সহিহ বোখারি: ৭৫১

বিশিষ্ট সাহাবি আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, নামাজের সময় আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ (রহমতের) দৃষ্টি রাখেন যতক্ষণ নামাজি অন্যকোনো দিকে দৃষ্টি না দেয়। যখন সে অন্যদিকে চেহারা ফেরায় তখন আল্লাহতায়ালা তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। -মুসনাদে আহমদ: ২১৫০৮

দুই. নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা।

ক. এমন মনোভাব নিয়ে নামাজ আদায় করা যে, এটিই তার জীবনের শেষ নামাজ।  
অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর; যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে- সূরা মাউন: ৩-৬

সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষিপ্তভাবে দ্বীনের কিছু কথা বলে দিন। জবাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি যখন নামাজ পড় তখন জীবনের শেষ নামাজ আদায়কারীর মতো নামাজ পড়। -সুনানে ইবনে মাজা: ৪৭১

খ. পুরো নামাজ এ অনুভূতি নিয়ে আদায় করা যে, আল্লাহতায়ালা আমাকে দেখছেন, আমি তার সামনে দন্ডায়মান।  

প্রসিদ্ধ হাদিসে জিবরিলে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, তুমি এমনভাবে ইবাদত করো যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর তুমি যদি আল্লাহকে না-ও দেখ তবে আল্লাহ তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন। -সহিহ মুসলিম: ৮

গ. সঙ্গে সঙ্গে এ খেয়াল করবে যে, আমি আল্লাহতায়ালার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি এবং তার সঙ্গে কথা বলছি। কেননা নামাজ হলো- আল্লাহতায়ালার সঙ্গে একান্তে কথোপকথন করা।

সহিহ বোখারিতে এসেছে, সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে আল্লাহর সঙ্গে একান্তে কথা বলে; যতক্ষণ সে তার নামাজে জায়গায় থাকে। -সহিহ বোখারি: ৪১৬

ওপরে বর্ণিত পন্থাগুলো অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহতায়ালার কাছে একাগ্রতা অর্জনের জন্য নামাজের বাইরে বিভিন্ন সময় দোয়াও করতে হবে।

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার আরেকটি সহজ পন্থা হলো, নামাজের কেরাত ও তাসবিহগুলোর দিকে মনোযোগ রাখা। অর্থ বুঝলে অর্থের দিকেও ধ্যান রাখা। কখনও অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যদিকে খেয়াল চলে গেলে ক্ষতি নেই। তবে স্মরণ হওয়ামাত্র পুনরায় মনোযোগ নামাজেই ফিরিয়ে আনতে হবে। স্মরণ হওয়ার পরও অন্যকিছু খেয়াল করতে থাকা বা ইচ্ছাকৃত অন্য কিছুর খেয়াল আনা নিষিদ্ধ। তাই এ থেকে বিরত থাকতে হবে। এভাবে নামাজ পড়লে ইনশাআল্লাহ তা একাগ্রতাবিশিষ্ট নামাজ বলে গণ্য হবে।  

উল্লেখ্য যে, নামাজে একাগ্রতা অর্জনের বিভিন্ন পর্যায় আছে। একাগ্রতা অর্জনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখলে আল্লাহতায়ালার দয়া ও রহমতে ধীরে ধীরে উচ্চ পর্যায়ের একাগ্রতাও হাসিল হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।