ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

স্বাধীনতার মসজিদে উদারতার ইতিহাস

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
স্বাধীনতার মসজিদে উদারতার ইতিহাস গাছপালার ফাঁকে মসজিদ নিগারা। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে ফিরে: এই মসজিদের নির্মাণ কাণ্ডে মিশে ‍আছে উদারতার এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের জনক মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান পুরোধা টুংকু আব্দুর রহমান। কোনে প্রকারের রক্তপাত ছাড়াই স্বাধীনতা এনে দেওয়া অবিসংবাদিত এই নেতা তখন দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। মালয় ফেডারেশনভুক্ত ১১ র‍াজ্যের মুখ্য মন্ত্রী মিলে ঠিক করলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটা মসজিদ নির্মাণ করবেন তারা।

সবার সম্মতিক্রমে ঠিক হলো, টুংকু আব্দুর রহমান পুত্রা আল হাজ নাম হবে নতুন মসজিদটার। কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন টুংকু আব্দুর রহমান।

মসজিদটির নাম তিনি রাখেন মসজিদ নিগারা। বাংলায় যার অর্থ জাতীয় মসজিদ।    

‍১৩ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই মসজিদ কমপ্লেক্সে এক সঙ্গে ১৫ হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মূল প্রার্থনা ঘরের ছাদটিকে মনে হয় মেলে থাক‍া এক অতিকায় ছাতা। সেই ছাদ থেকে ঝুলে থাকা ঝাড়বাতির বর্ণিল আলোর প্রতিফলন মেঝের গালিচায়। মসজিদ নিগারার বহুভূজী গম্বুজ।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চারপাশের দেওয়ালগুলো কার্যত কাঁচের। মূল প্রার্থনা ঘরকে ঘিরে থাকা বারান্দাগুলোতেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। মসজিদ ঘিরে থাকা উন্মুক্ত চত্বরে নানা আয়তনের পানির ফোয়ারা। নয়নাভিরাম বাগানও আছে মসজিদ কমপ্লেক্সে। মসজিদের গম্বুজে তারার নকশা কাটা।
মসজিদ নিগারার নামাজ ঘরের উপরে গম্বুজ।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মূল প্রার্থনা গৃহের পূর্ব দিকের বারান্দায় ফোয়ারার কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা মিনারটির উচ্চতা ৭৩ মিটার। মাথায় গোটানো ছাতার শেপ।

এ মসজিদে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও স্পেনের মসজিদ স্থাপত্যের মিশ্র প্রভাব থাকলেও সবচেয়ে বেশী প্রভাব ইস্তানবুলের নীল মসজিদের।
মসজিদ নিগারায় ফোয়ারার মাঝে মিনার।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এ মসজিদের অবস্থান কুয়ালালামপুর রেল স্টেশনের কাছেই। স্টেশন থেকে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড পথও আছে মসজিদে যাওয়ার। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই এ মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের স্থপতি হাওয়ার্ড অ্যাশলে এবং মালয়েশিয়ান হিশাম আল বাকরি ও বাহারুদ্দিন কাশিম এর নকশায় মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৫ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
মসজিদ নিগারার ফোয়ারা।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মসজিদের মূল কক্ষে প্রবেশ পথের সামনে মালয়, ইংরেজি ও আরবী ভাষায় রচিত পুস্তক রাখা আছে তাকে। ইংরেজিতে লেখা ধর্মীয় বাণী সম্বলিত বিভিন্ন প্রকারের লিফলেটও রাখা আছে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য।

১৯৮৭ সালে ব্যাপক সংস্কার হয় মসজিদটির। গম্বুজের পিঙ্ক কালার পাল্টে হয় সবুজ নীল। এখন এটা কুয়ালালামপুরের গর্ব। আধুনিক মসৃণ নগরে এক টুকরো ইতিহাস। এ মসজিদের সীমানা ঘেঁষেই ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম আর ইসলামিক আর্ট সেন্টার। ন্যাশনাল প্লানেটোরিয়াম আর পার্কের অবস্থানও মসজিদে নিগারার খুব কাছেই। এখানে এলে ঢুঁ মেরে আসা যায় বার্ড পার্ক আর পুলিশ মিউজিয়াম থেকেও।
মসজিদ নিগারা থেকে দেখা কুয়ালালামপুর সিটি।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর রেল স্টেশন ছাড়াও পাসার সিনি থেকে হেঁটেই আসা যায় মসজিদ নিগারায়। বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়া থেকে মসজিদ জামেক হয়ে বা দাতারান মারদেকা থেকে দক্ষিণ দিকে হাঁটা দিলে মসজিদ নিগারায় পৌঁছুতে ১৫ মিনিটের বেশী লাগবে না।
মসজিদ নিগারা।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমুসলিমরাও এই মসজিদ পরিদর্শন করতে পারেন। তাদের জন্য শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহের আর সব দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা। বিকাল ৩টা থেকে ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মসজিদ ‌উন্মুক্ত রাখা হয়। শুক্রবার জুম্মার দিনে কেবল বিকাল ৩টা থেকে ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মসজিদ নিগারা পরিদর্শন করতে পারেন।     

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।