কিন্তু না, এসবের কোনো তোয়াক্কা করা হলো না। সাধারণ হজযাত্রী থেকে শুরু করে বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব ও হাজী কল্যাণ পরিষদের নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও হজের প্লেন ভাড়া বাড়িয়ে ফেলা হলো, সেইসঙ্গে বেড়ে গেলো হজের খরচও।
পবিত্র হজ পালনের খরচ নির্ধারণ করে ‘হজ প্যাকেজ ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু’টি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের বিধান রাখা হয়েছে এ খসড়ায়।
প্যাকেজ-১ অনুযায়ী, এবার খরচ হবে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও হজের খরচ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকার কম হওয়া যাবে না।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদন শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম যা জানিয়েছেন, সে হিসেবে এবার প্লেন ভাড়া ১৪ হাজার টাকা বেশি ধরা হয়েছে। গতবার প্লেন ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৭২১ টাকা। এ মৌসুমে প্লেন ভাড়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৫১ টাকা।
সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বাকি ১ লাখ ২০ হাজার জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
শুধু এবার নয়, নিয়ম করে প্রতি বছর হজের খরচ বাড়ছে। এর কিছু বাড়ানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। যেমন- আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও ডলারের দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে প্লেন ভাড়া বাড়ানো হয় যুক্তিহীনভাবে। অথচ ভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই বলে বরাবরই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, সৌদি এয়ারলাইন্স নেয় ৪৮ হাজার টাকা। এ বছরের ওমরায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জেদ্দা যাওয়া-আসার ভাড়া নিচ্ছে ৫২ হাজার টাকা। অন্যদিকে সৌদি আরবে অন্য (শ্রমিক, ব্যবসা) ভিসায় প্লেনের টিকিটের মূল্য নেওয়া হয় ৩৬ হাজার থেকে ৩৯ হাজার টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্লেন ভাড়া বাবদ খরচ হয় ৭১ হাজার রুপি।
অথচ সেই ভাড়া হজের সময় ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৫১ টাকা করা কোনোমতেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। হজের সময় বিমানের ফ্লাইট হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দা গিয়ে আসার সময় খালি আসে এবং হজ শেষে ঢাকা থেকে খালি গিয়ে জেদ্দা থেকে হাজীদের নিয়ে আসে- এ যুক্তিতে ভাড়া দ্বিগুণ করে ৪৮ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ হাজার টাকা করা যেতে পারে- কিন্তু তা কোনোভাবেই তিন গুণ হতে পারে না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিমানের ক্রমাগত লোকসান ঠেকাতে আবারও হজ মওসুমকে উপলক্ষ করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্তকে অনেক হজযাত্রী ‘অযৌক্তিক ও চাপিয়ে দেওয়া’ বলছেন। তাদের এমন সিদ্ধান্তের ফলে হজে গমনেচ্ছুদের নানা দুর্ভোগে পড়তে হবে। বিশেষ করে একবছর আগে হজ নিবন্ধনের পর যখন প্লেন ভাড়া বাড়ানোর খবর আসে, তখন হজে গমনেচ্ছুদের মাথায় বাজ পড়ে। অনেকেই স্বল্প সামর্থ্যে হজের প্রস্তুতি নিয়ে দারুণ বিড়ম্বনার শিকার হন।
যদিও প্লেন ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে আরও কিছু যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গত এক বছরে ৪ দফা প্লেনের জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং হজ ফ্লাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার ওপর সৌদি সরকারের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ আরোপ।
কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বিমান কর্তৃপক্ষের ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি টেকে না। কারণ, নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ বিমান সরকারের লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সুতরাং হজকে কেন্দ্র করে ভাড়া না বাড়িয়ে বিমানের দুর্নীতি বন্ধ আগে প্রয়োজন। বিমানকে শুদ্ধাচারের আওতায় আনতে সরকার নানা চেষ্টা করেও সুফল পাচ্ছে বলে মনে হয় না। উল্টো খেসারত দিতে হচ্ছে হজযাত্রীদের। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তর্কের খাতিরে বিমান কর্তৃপক্ষ যেসব যুক্তি দেখিয়ে হজযাত্রীদের ভাড়া বাড়াচ্ছে, এ যুক্তি মেনে নিলেও বলা যায়- ওমরার তুলনায় ভাড়া বড়জোর দ্বিগুণ হতে পারে, কিন্তু তা প্রায় তিনগুণ কেন?
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যেসব মানুষ হজ করতে সৌদি আরব যান, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির। এখন সরকারিভাবে যদি বিমানের ভাড়া তিনগুণ বাড়ানো হয়, তাহলে এসব হজ পালনেচ্ছু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আমরা মনে করি, বিমানের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। হজ ফ্লাইটের ভাড়া না বাড়িয়ে সরকারকে বরং বিমানকে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর হতে হবে।
আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া সহনীয় মাত্রায় রাখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের অবেগকে মূল্যায়ন করবেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
এমএইউ/এইচএ/