শাস্তি হিসেবে ৮০টি বেসরকারি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত, ১৮টি এজেন্সির কার্যক্রম এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থগিত ও বেশকিছু এজেন্সিকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব এজেন্সিসহ ১৫৩টি এজেন্সিকে মোট সাড়ে ১১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
২০১৭ সালের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ৬৩৫টি বেসরকারি হজ এজেন্সি। তন্মধ্যে হজযাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে বহুসংখ্যক এজেন্সি। দেশে এবং সৌদি আরবে হজ পালনকালে তারা এসব অনিয়ম করে। এ ধরনের মোট ২৪৫টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে তিনটি (কমিটি ১, কমিটি ২, কমিটি ৩) কমিটি গঠন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত সব হজ এজেন্সির বক্তব্য, লিখিত বক্তব্য বা জবানবন্দি গ্রহণ, আনীত অভিযোগ ও অভিযোগকারীর বক্তব্য বা জবানবন্দি এবং সৌদি আরবে গঠিত তদন্ত টীম কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত রিপোর্ট যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করে।
দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায়- লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত, লাইসেন্স স্থগিত, বিভিন্ন অংকের আর্থিক জরিমানা, মামলার সুপারিশ, তিরষ্কার ও এজেন্সির মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করল।
এ ছাড়া দুই শতাধিক এজেন্সিকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক এবং বেশ কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালেও অনুরুপ হজে প্রতারণা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায়ে ৮৪টি এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২০১৫ সালে অনিয়মের দায়ে ৬৮ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত ও জরিমানার সাজা দিয়েছিল সরকার।
প্রতিবছর হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা সময় বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। হজ এজেন্সিগুলো নানা ধরনের প্রতারণা করে থাকে। শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণা ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হজযাত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন হজ মৌসুমেও এজেন্সিগুলোর কারণে হজযাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন। এর কিছু অংশ সরকারি ব্যবস্থাপনায় গেলেও বেশিরভাগই বিভিন্ন বেসরকারি হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করে থাকেন। কিন্তু ধর্মীয় এই বিষয়টিতেও নানাবিধ অব্যবস্থাপনা, প্রতারণা আর দুর্নীতি হয়।
আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে হজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। পৃথিবীর আর কোথাও হজযাত্রী প্রেরণ কিংবা হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনিয়ম হয় কিনা- জানা নেই।
হজের মতো একটি বিষয়ে হজ এজেন্সিগুলোর অনিয়ম আমাদের বিস্মিত করে। তাদের কাছে হজ যেন একটা ব্যবসা। অথচ হজযাত্রীরা আল্লাহর ঘরের মেহমান। আমরা মনে করি, তাদের ভেতরে জেগে উঠুক সেই চেতনাবোধ। যে বোধের কারণে মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ স্থান পাবে সবকিছুর উর্ধ্বে। থাকবে না অতি মুনাফাখোরি চিন্তা আর ক্ষমতার কারণে স্বেচ্ছাচারি মনোভাব।
শুধুমাত্র এই বোধ জাগ্রত হলে, হজ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি আর প্রতারণা বন্ধ হবে। না হলে লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত, শাস্তি, জেল-জরিমানার বছরের পর বছর চলবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। অন্ততপক্ষে বিগত ৩ বছরে শাস্তি পাওয়া হজ এজেন্সির সংখ্যা দেখে তাই বলা যায়। তাই প্রশ্ন উঠছে, এতো শাস্তির পর কী শোধরাবে এজেন্সিগুলো? স্বস্তি দেবে আল্লাহর ঘরের মেহমানদের?
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
এমএইউ/