আয়াতে বর্ণিত নাশিয়াতাল লাইল সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এর অর্থ রাতের নিদ্রার পরে নামাজের জন্য গাত্রোথান করা। ’ ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- তাহাজ্জুদের নামাজের মাধ্যমে প্রবৃত্তি দমন-দলন করা সহজ।
তাহাজ্জুদের নামাজের সময় রাতের নিদ্রার পরের সময়। রাতের প্রথম প্রহরে মানুষ কর্মব্যস্ততার সময় অতিবাহিত করে, ইশার নামাজসহ আনুষঙ্গিক আরও বহু ব্যস্ততা রয়েছে কিন্তু রাত দ্বিপ্রহরের পরে রাতের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। এ সময় গাত্রোথান করে ঘুমের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে বান্দা যখন তার রবের নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য রাতের নামাজের দণ্ডায়মান হয়; তখন স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির এক নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
এ সময় নামাজ আদায়কারী তার প্রবৃত্তিকে বশীভূত করার মাধ্যমে তার আরামের বিছানা ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। আর নামাজের প্রাণ হচ্ছে কোরআন। রাতের নামাজে কোরআন কারিমের তেলাওয়াতের সুগভীর মূর্চ্ছনায় মানবাত্মা হয় প্রশান্ত ও দিপ্তীময়। এ প্রশান্ত আত্মাকে এই নামাজ নিয়ে যায় এমন একটি রহস্যময় আলোকিত জগতে যে জগতের শ্রুত এবং দৃশ্যমান তথ্যাবলি কোরআনে কারিমে ছত্রে ছত্রে বর্ণিত এবং উপস্থাপিত হয়েছে।
মানব মনে মন্দ কর্মের উসকানি দাতা নফছে আম্মারা বশীভূত করতে পারলে, মানব সমাজের অন্যায়, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, গুম-খুন, অশ্লীলতা আর পাপাচার বন্ধ হতে বাধ্য। আর এটা সম্ভব তাহাজ্জুদের নামাজের মাধ্যমে। তাহাজ্জুদ নামাজ নবী করিম (সা.) নিয়মিত পড়তেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদে)। ’ -সূরা বনি ইসরাইল: ৭৯
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত, অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়। এই নামাজ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য ছিল। এর রাকাত সংখ্যা আট, বারো থেকে বিশ পর্যন্ত উল্লেখ পাওয়া যায়। চার রাকাত বা দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগণিত হবে।
নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য, তারা শেষ রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। তাহাজ্জুদ নামাজের আগে-পরে কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতের কাজ। এ সময়ের দোয়া কবুল করা হয়। বর্ণিত আছে, এ সময় আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।
মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হত। এখনও মক্কা-মদিনায় এই নিয়ম চালু আছে। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়া উত্তম। তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা-কেরাত নিম্ন স্বরে পড়তে হয় এবং এর জন্য ইকামাতেরও প্রয়োজন নেই।
নফল ইবাদত বিশেষ উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয় কিংবা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে জিন আসে অথবা তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়- এ ধারণা সঠিক নং। তবে কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং প্রচারের মানসিকতা যেন না থাকে; এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজে যত ইচ্ছা তত দীর্ঘ কেরাত পাঠ করা যায়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এমএইউ/