কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পরিকল্পনা অনেকের নেই। তাহজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য রমজানের পরিকল্পনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এভাবে রমজানের রুটিন সাজাতে পারলে আত্মগঠন ও রমজানের পূর্ণ ফায়দা অর্জন সহজ হবে। রমজান পেয়েও যে নিজের আত্মশুদ্ধি করতে পারলো না তার চেয়ে অভাগা আর কে আছে?
রাসুল (সা.) শাবানের ১৫ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পরই জোরেশোরে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন।
রমজান এলে কোরআন তেলাওয়াত ও দান-সদকা প্রবাহিত বাতাসের মতো বাড়িয়ে দিতেন। রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে জিব্রাইল (আ.) কে একবার পুরো কোরআন শোনাতেন।
আবার জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.) কে পুরো কোরআন শোনাতেন। যে বছর রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেন ওই বছর দুই খতম কোরআন জিব্রাইল (আ.) কে শোনান। আমাদের রমজান পরিকল্পনায় অবশ্যই কোরআনকে প্রাধান্য দিতে হবে।
যারা কোরআন পড়তে পারি না তারা কোরআন পড়া শিখবো। কোরআন বুঝবো-মানকো এবং সে অনুযায়ী আমল করবো। তবেই পবিত্র রমজান ও কোরআন আমাদের জন্য সুপারিশ করবে।
আল্লাহকে পাওয়া ও গুনাহ মাফের মাস রমজান। জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করতে হবে। আমাদের কর্মব্যস্ততা কমিয়ে আনার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে।
যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে শেষ দশদিন যেন ইতিকাফ করা যায়। আমাদের দুর্ভাগ্য হল- রমজানের শুরুতে ইবাদতে জোয়ার আসলেও শেষে ভাটা পড়ে। অনেকে শেষ দিনগুলো মার্কেট ও কেনা-কাটায় ব্যস্ত থাকার কারণে ফরজ নামাজও অনেক সময় আদায় করতে পারেন না। তাই পরামর্শ থাকবে সম্ভব হলে এখনই কেনাকাটা শেষ করে ফেলুন।
রমজানের শেষে যেন মার্কেটের চেয়ে মসজিদে সময় বেশি ব্যয় হয় এভাবে পরিকল্পনা সাজান। রোজার প্রকৃত তাৎপর্য উপলদ্ধি না করলে শুধু অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন হবে না। সারাদিন না খেয়ে থাকলে সিয়াম (রোজা) হয় না। সিয়াম হলো সাধনার নাম।
এ সাধনা চলবে জীবনব্যাপী। তারাবি, তাহাজ্জুদ, কোরআন চর্চা এ সাধনারই একেকটি অংশ। তেমনি সারাদিন উপোস থাকা সিয়াম সাধনার একটি অংশ মাত্র।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা শুধু এ অংশটিকেই সিয়াম মনে করে নিয়েছি। সিয়াম হলো আত্মার উপোস। অর্থের উপোস। কর্মের উপোস। চিন্তারও উপোস। জীবনের প্রতিটি দিক মহান আল্লাহর দেখানো পথে চলার নামই প্রকৃত সিয়াম।
আত্মাকে প্রশ্ন করুন রমজানের জন্য নিজের দেহ-আত্মা, মন-মননকে কতটা প্রস্তুত করেছি আমরা? রমজানের প্রস্তুতির জন্য যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হল আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির সঙ্গে আত্মিক প্রস্তুতিও নিতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যায়, অবিচার, সুদ-ঘুষ, মিথ্যা থেকে নিজের আত্মাকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। হ্যাঁ! আমরা এতদিন পাপের সাগরে ডুবে ছিলাম ঠিক। কিন্তু সময় এসেছে ফিরে যাবার। তাওবাতুন নাসুহা করার।
রমজান উপলক্ষে আমাদের সব ধরনের অন্যায় অবিচার থেকে তওবা করে খাঁটি জিন্দেগি শুরু করতে হবে। আর এজন্য এখন থেকেই মানসিক ও বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হতে পারে এ রমজানই আমার জীবনের শেষ রমজান।
এ বছরের পর আর কোনো রমজান আমি পাবো না। তাই এ রমজানকেই আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। হে দরদী পাঠক; আপনি যদি এ পূণ্যময় মাস আত্মিক সিয়ামে কাটাতে পারেন, তবে জেনে রাখুন আপনিই হবেন সবচেয়ে ভাগ্যবান। যাকে আল্লাহ ডেকে নেবেন তার জান্নাতে। হে আল্লাহ তাওফিক দিন আমরা যেন খাঁটি সিয়াম পালনকারী হতে পারি।
লেখক: বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
এমএ/