ওয়াদিয়ার রাজ বংশের রাজত্বকালে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হায়দার আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র মহীশুরের নবাব হন। তার পুরো নাম সইয়দ ওয়াল শহরীফ সুলতান ফতেহ আলী সাহাব টিপু।
মহীশুরের রাজধানী শ্রীরাঙ্গা পাতনমে টিপু সুলতানকে পরাস্ত করে ব্রিটিশ বাহিনী তার রাজ্য দখল করে। এরপর টিপু সুলতানের মৃত্যুর ছয় বছর পর, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে টিপু সুলতানের সমস্ত পরিবারকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়।
তার কারণ, নবাবের পরিবারকে নিজেদের রাষ্ট্র থেকে সরিয়ে দেওয়া না হলে সুলতানের পরিবার ফের শক্তি সঞ্চয় করছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য। এছাড়া সে সময় কলকাতা ছিল ব্রিটিশদের রাজধানী, তাই গোটা পরিবারকে কলকাতায় রাখা হলে তাদের নজরদারী করতে সুবিধা হবে। এরপর ধীরেধীরে নবাবের পরিবার হয়ে ওঠে কলকাতাবাসী।
টিপু সুলতানের পুত্র গোলাম মোহাম্মদ যখন কলকাতায় আসেন তখন তিনি ছিলেন ছোট্ট শিশু। তিনিও ছিলেন তার পিতার মতই বিভিন্ন গুণাবলী সম্পন্ন। জড়িত ছিলেন নানাবিধ সামাজ কল্যাণ কাজের সঙ্গে। মধ্য কলকাতায় প্রথম মসজিদ বানানোর পর, শুধুমাত্র উপাসনার জন্য টালিগঞ্জে তার বাবার নামে দ্বিতীয়টি মসজিদটি নির্মাণ করেননি তিনি। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি একটি মিউজিয়াম বানানোর পরিকল্পনা করেন গোলাম মোহাম্মদ। যেখানে ধার্মিক কাজের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার জনগণ জানতে পারবে পিতার ঐতিহ্য।
একবিঘার একটি তালাব সহ ছয় বিঘা জমির উপর পশ্চিম পাশে ১০টি বৃহৎ গম্বুজ, চারটি বড় মিনার ও ১৬টি ছোট মিনার দ্বারা টিপু সুলতান শাহি মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। আর মিউজিয়ামের নাম রাখা হয় 'মহীশুর টাইগার'। কারণ টিপু সুলতানকে ‘টাইগার অফ মহীশুর’ নামে ব্রিটিশদের কাছে পরিচিত ছিলো।
এই মিউজিয়ামে থাকতো নবাবের অঙ্গসজ্জা, ব্যক্তিগত বস্তু, সামরিক অস্ত্র এবং কামান। পরে ভারত সরকার সমস্ত জিনিস জাদুঘরে নিয়ে যায়। এখানেই কবরে শায়িত আছেন নবাবের ১১ জন বংশধর। গোপন ক্যামেরা দিয়ে চলে সার্বক্ষণিক নজরদারী।
যে কামানগুলো সরকার নেয়নি, এখন সেগুলো বাতিলস্তম্ভ বা কোথাও লম্বা করে মাটিতে পুতে রাখা হয়েছে। এক সময় এই কামানের মধ্যে লোহার গোলা ঢুকিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার লর্ড ওয়েলেসলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন টিপু সুলতান। এছাড়া এই জমিতে আছে নবাবের পরিবারের লাগানো আম গাছ। সেসময় আম গাছগুলোয় পানির বদলে গোলাপ পানি দেওয়া হতো। লোক মুখে প্রচলিত সুমধুর ঘ্রাণওয়ালা এরকম আম কোথাও পাওয়া যায় না। আম গাছগুলো আজও জীবিত।
বর্তমানে মসজিদটি সুসজ্জিত এবং ধার্মিক কাজ চলে প্রথা মাফিক। নবাবী প্রথা মেনে প্রতি রমজানে টালিগঞ্জ মসজিদে কমিটি কমপক্ষে ৩শ জনের ইফতারের আয়োজন করে। এছাড়াও তারাবির নামাজেরও ব্যবস্থা আছে। কেই চাইলে গোটা রমজান এখানেই কাটাতে পারে। তার জন্য রাখা আছে আলাদা ব্যবস্থা। এই মসজিদে একজন ইমাম ও দুইজন মোয়াজ্জেম সদা তৎপর থাকে গোটা রমজান মাসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
বিএস/এসএইচ/