কিন্তু ইসলামে কেবল আল্লাহর স্মরণ ও তার ইবাদত-বন্দেগির কথাই বলা হয়নি। বরং নামাজ আদায়ের পর জীবিকা নির্বাহের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
নামাজের পর যে দোয়াটি রাসুল (সা.) বেশি বেশি পড়তেন, তা হলো- ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করো, আখেরাতেও কল্যাণ দান করো। ’ (সুরা বাকারা : ২০৯)
অনেক তাফসিরবিশারদ বলেছেন, এখানে ‘দুনিয়ার কল্যাণ’র উদ্দেশ্য ধন-সম্পদ ও সম্মানজনক রিজিক। যেন কোনো প্রয়োজনে কখনো কারো কাছে মুখাপেক্ষি হতে না হয়।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘পরকালীন জীবনে আল্লাহ আপনাকে যা দান করবেন, আপনি তা অনুসন্ধান করুন। কিন্তু পার্থিব জীবনে আপনার ন্যায্য অংশের কথা আপনি ভুলে যাবেন না। ’ (সুরা কাসাস : ৭৭)
নিজ হাতে কামাই-রোজগার ও হালাল উপার্জনের নির্দেশ কেবল সাধারণ মুসলমানদেরই দেওয়া হয়নি। বরং যুগে যুগে সব নবী-রাসুলরা এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করুন এবং নেক কাজ করুন। ’ (সুরা মুমিনুন : ৫১)
ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুগে যুগে এ নির্দেশনা মোতাবেক নবী-রাসুলগণ নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করেছেন। হজরত আদম (আ.) কৃষিকাজ ও তাঁতের কাজ করেছেন। হজরত ইদরিস (আ.) দর্জির কাজ করেছেন। হজরত হুদ ও ছালেহ (আ.) ব্যবসায়ী ছিলেন। হজরত ইব্রাহিম ও লুত (আ.) কৃষি পেশা গ্রহণ করেছিলেন। হজরত শুয়াইব (আ.) পশু বিচরণ করেছেন এবং বাজারে এগুলোর দুধ বিক্রি করতেন। হজরত দাউদ (আ.) লোহা দিয়ে নানা ধরনের যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতেন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বকরি পালন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেছিলেন।
ইসলামী শরিয়তে নিজ হাতে উপার্জিত খাবার গ্রহণে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাবার থেকে উত্তম কোনো খাবার নেই। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ২০৭২)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ইমান আনার পর হালাল উপার্জন অন্যতম কর্তব্য। ’ (শুআবুল ইমান, হাদিস নং: ৮৩৬৭)
মানবজীবনে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজনীয়তা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই হালাল উপায়ে অর্থোপার্জনের যত পথ ও পন্থা আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সেগুলো অবলম্বনে উৎসাহিত করেছেন। কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘কোনো মুমিন যখন গাছ লাগায় অথবা কৃষিজ ফসল ফলায়, অতঃপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা পশু আহার করে- সেটি তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। ‘ (বুখারি, হাদিস নং: ২৩২০)
ব্যবসার ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সততা ও সত্যবাদিতা নিয়ে যারা ব্যবসা পরিচালনা করবে, তারা কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে উঠবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১২০৯)
শিল্প ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) একইভাবে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। সে কারণেই রাসুলের জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরামের একটা বিরাট দল ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, কৃষি ও শিল্পে নিজেদের দক্ষতার গুণে বিপুল ধন ঐশ্বর্যের মালিক হয়ে গিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ রাসুলের জবান থেকে জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদও পেয়েছিলেন।
উসমান ইবনে আফফান (রা.), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)- এ রকম অনেক সম্পদশালী সাহাবির নাম ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে।
বৈষয়িক ও পার্থিব কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়, বরং হালাল উপায়ে সম্পদসম্ভার উপার্জন করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণই আসল ধার্মিকতা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
এমএমইউ/আরএ