পবিত্র কোরআনের মোট ২৮টি সুরার ৮১টি আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। তিনি সুদীর্ঘ ৯৫০ বছর দুনিয়ায় ছিলেন।
ফলে বারবার সতর্ক করার পর আল্লাহতাআলার নির্দেশে প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও মহাপ্লাবনের হাত থেকে তৎকালীন ঈমানদার মানুষ ও জীবজন্তুকে বাঁচানোর জন্য হযরত নুহ (আ.) একটি বৃহৎ নৌকা তৈরি করেছিলেন।
এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ কোরআন-হাদিস এবং বিভিন্ন আসমানি কিতাবে রয়েছে। তৎকালীন প্রত্যেক প্রজাতির পশু-পাখির জোড়া নিয়ে হযরত নুহ (আ.)-এর অনুসারীরা নৌকায় উঠলে মহাপ্লাবন শুরু হয়। দীর্ঘ এই মহাপ্লাবনে নৌকার আরোহীরা বাদে বাকি সবাই ডুবে মারা যান।
নুহ (আ.)-এর নৌকাটির দৈর্ঘ্য ১২শ’ গজ ও প্রস্থ ৬শ’ গজ ছিল। এছাড়াও এটি তিনতলা বিশিষ্ট ছিল। প্রথম তলায় গৃহপালিত ও হিংস্র জীব-জন্তু, দ্বিতীয় তলায় মানুষ এবং তৃতীয় তলায় ছিল পাখ-পাখালি। নৌকায় চল্লিশ জোড়া নারী-পুরুষ ছিলেন। তারা এতে ১২০ দিন অবস্থান করেন। প্লাবনের পর নৌকাটি ‘জুদি’ পাহাড়ে গিয়ে নোঙর করে।
ঐতিহাসিক সেই মহাপ্লাবনের পর পেরিয়েছে কালের পর কাল। অতিক্রম হয়েছে বছরের পর বছর। সেই নৌকার অস্তিত্ব কিংবা চিহ্ন এখন আর নেই। অবশ্য তুরস্কের একটি পাহাড়ে সেই নৌকা অবতরণের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবী করা হয়। বিপুল সংখ্যক পর্যটক সেখানে ভিড়ও করেন প্রতিবছর। এছাড়া আমেরিকায় এই নৌকা নিয়ে একটি জাদুঘরও করা হয়েছে বলে জানা যায়।
আর এখন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের বরাতে জানা গেছে, নেদারল্যান্ডসের কাঠমিস্ত্রি জোহান হুইবার নুহ (আ.)-এর সে নৌকার (কল্পনাপ্রসূত) একটি প্রতিরূপ তৈরি করেছেন। নৌকাটি ৪১০ ফুট লম্বা হওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক তলা ৯৫ ফুট প্রশস্ত ও ৭৫ ফুট উচ্চতায় তিন তলা বিশিষ্ট।
তৈরির পর দুই হাজার ৫০০ টনের নৌকাটি পানিতেও ভাসানো হয়েছে। শিল্পী জেহান জানিয়েছেন, বাইবেলে বর্ণিত পরিমাণ মাফিক নিখুঁত ও পুঙ্খানোপুঙ্খভাবে তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে এটি। নবী নুহ (আ.)-এর সে নৌকার আদলে জোহানের নৌকাটিতেও কাঠের তৈরি বিভিন্ন প্রজতির প্রাণী রাখা হয়েছে।
নৌকাটির নির্মাণকাজে সর্বমোট খরচ পড়েছে ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে এটি রাখা হয়েছে। ২০১২ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার পর্যটক জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন।
নৌকা তৈরির কাজ শুরুর করার পর থেকেই নির্মাণশিল্পী জোহান নৌকাটি সাগরে ভাসিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইলে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তার ভাবনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকাটিতে কোনো ধরনের ইঞ্জিন না থাকা।
তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বিভিন্ন উপায়-উপকরণ বেছে নেয়া হচ্ছে। তবে জোহান চাচ্ছেন বড় কোনো জাহাজ দিয়ে সাগরপথে টেনে নিয়ে যেতে। সেক্ষেত্রে জোহানের প্রয়োজন পড়বে ১৩ লাখ ডলারের মতো পথ-খরচের। তাই বিভিন্ন সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে নির্মাতা জোহান আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন। হয়তো কোনো সহযোগিতা তিনি পেয়েও যেতে পারেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
এমএমইউ/টিএ