মসজিদের পূর্ব দেয়ালের প্রবেশদ্বারের ওপর ১২/৯ ইঞ্চি আয়তাকার একখণ্ড মসৃন প্রস্তরের শিলালিপি রয়েছে। প্রাচীন ফার্সি অক্ষরে সেখানে কিছু কথালেখা রয়েছে।
কথিত আছে, দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ (১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ)ঐতিহাসিক কান্তজির মন্দির নির্মাণের জন্য পারস্য থেকে কিছু স্থপতি ও নির্মাণশিল্পী নিয়ে এসেছিলেন। প্রায় টানা ৪৮ বছর মন্দিরের নির্মাণকাজঅব্যাহত থাকে। আর নির্মাণশিল্পী ও শ্রমিকরা ছিলো মুসলমান ধর্মাবলম্বী। তারা মহারাজার অনুমতি নিয়ে কান্তজীর মন্দিরের ১কিলোমিটার দূরে নয়াবাদ নামক স্থানে বর্তমানের মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং মসজিদের পাশেই বসবাস শুরু করেন। সেই থেকে এ গ্রাম নাম নয়াবাদ মিস্ত্রী পাড়া নামে পরিচিতি পায়।
মোঘল স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্বলিত নয়াবাদ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ মাত্র ৫.৫ মিটার। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার এই মসজিদের ৪ কোনায় রয়েছে ৪টি অষ্টাকৃতির টাওয়ার। প্রতিটি টাওয়ারের শীর্ষে রয়েছে পলেস্তারা দিয়ে তৈরী দৃষ্টিনন্দন ছোট গম্বুজ। মসজিদের দরজা ৩টি, জানালা ২টি। ভিতরে ৩টি মিহরাব রয়েছে, যা বহু খাঁজযুক্ত খিলানাকৃতির নকশাখচিত।
মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদের ভেতরের দিকে ছাদের উত্তর-দক্ষিণ প্রান্তে ও মধ্যবর্তী স্থানে বড় রকমের ফাটল দেখা দিয়েছে। প্লাস্টারসহ নান্দনিক টেরাকোটা শিল্প সংস্কারের অভাবে খসে পড়ছে। ভিতরাংশের পশ্চিম দেয়াল জুড়ে সবুজ শ্যাওলা জমে আছে। ১টি বড় গম্বুজে ফাটল ধরেছে। সবমিলিয়ে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক এই নয়াবাদ মসজিদ।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় মসজিদটির এ বেহাল দশা। অথচ ইতোমধ্যে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ১ একর জায়গা জুড়ে সীমান প্রাচীর, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, দর্শনার্থীদের বসার জায়গা, ওযুখানা, গোসলখানা, টয়লেট ও বাহারী ছাউনী ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। এবতেদায়ী মাদ্রাসায় চালু আছে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কর্মসূচি। গণশিক্ষা কর্মসূচির শিক্ষক মো: মোস্তাফিজুর রহমান (৩০) বাংলানিউজকে জানান ‘প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ জন দর্শনার্থী আসেন এই মসজিদ দেখতে। কিন্তু কোনোরূপ সংস্কার কাজ না হওয়ায় মসজিদটি দর্শনার্থীদের কাছে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। ’
নয়াবাদ মসজিদের নির্মাণ কারিগরদের পরবর্তী বংশধর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জামালউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় ৩০০ বছরের মুসলিম ঐতিহ্য আর ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে নয়াবাদ মসজিদটি। ’
মসজিদের বর্তমান ঈমাম হাফেজ মো: জাহিদ হাসান বলেন, ‘প্রায় ৫০-৬০ জন মুসল্লি প্রতি নামাজেমসজিদে উপস্থিত হন। প্রায় ২০০ জনের মত মুসল্লি জুমআর নামাজ পড়েন। জুমার দিন বাইরের খোলা বারান্দায় নামাজ পড়তে হয় মুসল্লিদের।
হিন্দু প্রধান এলাকা হলেও মসজিদের আশে পাশে ৪০টি মুসলিম পরিবার রয়েছে। এছাড়াও মাঝাপাড়া, ডাক্তার পাড়া, আসাম পাড়া হতেও মানুষ এখানে আসে নামাজ পড়তে আসে। বৃষ্টির দিনে মুসল্লিদের নামাজ পড়তে কষ্ট হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্বঅধিদপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা নাহিদ সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মসজিদের সংস্কার কাজ না করে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ করা ঠিক হয়নি। তবে আমরা খুব শিগগির মসজিদের সংস্কার কাজ শুরু করবো। যেহেতু সেই আমলে নির্মাণ কাজটিতে কোনো সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি, শুধুমাত্র চুন সুড়কি দিয়েই স্থাপনার কাজটি করা হয়েছে। তারপরও যে এই স্থাপনাটি এতদিন টিকে আছে তা অনেক বড় ব্যাপার। ’
যাতায়াত
দিনাজপুর জেলা সদর হতে প্রায় ১৭কি:মি: উত্তরে কাহারোল উপজেলার ঢ্যাপা নদীর পশ্চিম তীরঘেঁষে নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর থেকে যাওয়ার বিভিন্ন যানবাহন রয়েছে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৯
এমএমইউ/