যখন শৈশবে
তার চাচা কুর্দি সেনাপতি আসাদুদ্দিন শেরকোহ সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি ও তার একভাই নাজমুদ্দিন আইয়ুবকে নিয়ে মসুল শহরে হিজরতকালে সৌজন্য-সাক্ষাত করতে ইমাদুদ্দিন জনকির স্মরনাপন্ন হন। ইমাদুদ্দিন ছিলেন বিচক্ষণ সেনাপতি, সমরকৌশলী ও দক্ষ তিরান্দাজ।
সৈন্য-শিবিরেই আইয়ুবি পরিবারটি দিন কাটাতে থাকে। একজন বিদগ্ধ সমরবিদের সান্নিধ্য লাভ ও শিষ্যত্ব গ্রহণের ফলে সালাহ উদ্দিন আইয়ুবিও দক্ষ সেনানি হয়ে ওঠেন।
ইমাদুদ্দিন জনকির শাহাদাত বরণের পর তার ছেলে নুরুদ্দিন জনকি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আইয়ুবিদের সহযোগিতায় তিনিও বেশ ক্ষমতাধর ছিলেন। যার দরুন ইরাকের দামেস্কও তার শাসনাধীন ছিল।
নিজেকে গড়ে তোলার পালা
দামেস্কেই সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির তারুণ্যের প্রথম প্রহর আরম্ভ হয়। সেখানে তিনি ইসলামী শরিয়তের মৌলিক জ্ঞান-বিজ্ঞান লাভ করেন। ঘোড়দৌড় ও তিরান্দাজিসহ যুদ্ধের ময়দানে শত্রুপক্ষকে কুপোকাত করার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগুলোও রপ্ত করেন। চাচা আসাদুদ্দিন ছায়াদর্শে নিজেকে পুরোপুর নিয়োগ করেন।
নুরুদ্দিন জনকি পিতাকে হারানোর পর সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবির চাচা আসাদুদ্দিন শেরকোহকে তার একান্ত সহচরের পদমর্যাদা দেন। এতে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবির বুদ্ধিদীপ্ততা, সৈন্যশক্তি পরিচালনার পারদর্শীতা ও দক্ষতা নুরুদ্দিনের বেশ নজর কাড়ে।
ইতিহাসবিদ আবু সামাহ বলেন, নুরুদ্দিন জনকি সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবির কাছে টেনে নেন। তাকে চোখে চোখে রাখতে শুরু করেন। নুরুদ্দিন জনকির বিভিন্ন কার্যপরিচালনায় আইয়ুবিকে তিনি গুরুত্ব দেন। এমনকি তার আদেশে সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক কাজে শেরকোহর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। পরবর্তীতে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবি তার ‘কাতিমুল আসরার’ বা ‘গোপন তথ্যবিষয়ক’ পরামর্শদাতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
বাইতুল মুকাদ্দাস জয়ের পথে
৫৮২ হিজরিতে জেরুজালেমের রাজা তৃতীয় বল্ডইনের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বেশকিছু সমস্যার সূত্রপাত হয়। ক্ষমতার মসনদ নিয়ে প্রজাদের কাড়াকাড়ি ক্রুসেডার সৈন্যদের মাঝে অনৈক্য। এমন মোক্ষম সুযোগে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবি তার হিসাবটি কষে নিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবি সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। বরং নুরুদ্দিন জনকির জেরুজালেম বিজয়ের স্বপ্নটি তার বুকে আলোকিত হয়ে ওঠে দ্বিগুণ আলোয়। চাচা শেরকোহর আদেশে মিসর-সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশের গভর্নর নিযুক্ত হওয়ায় সেসব দেশের দায়িত্বে থাকাবস্থায় তিনি ক্রুসেড অপশক্তি থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস ছিনিয়ে নিতে পূর্ব থেকেই বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করেন। সে সূত্রে হিত্তীন প্রান্তরে সেনাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ‘হিত্তীন যুদ্ধ’ সংঘটিত হয়। ইতিহাসবিদরা এটিকে ‘মারিকাতু হিত্তিন আল-ফাসিলা’ বা বাইতুল মুকাদ্দাসের সুস্পষ্ট বিজয় বলে অভিহিত করেছেন।
হিত্তিন প্রান্তরে সুলতান আইয়ুবি
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে ৪ই জুলাই ক্রুসেডার ও সুলতান আইয়ুবির বীর সেনানিদের মাঝে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে ক্রুসেডাররা শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। ঐতিহাসিক আবু শামাহ বলেন, ‘ক্রুসেডারদের তুলনায় মুসলিম সেনাবাহিনীর সংখ্যা নিতান্ত কম হয়েও এক অদৃশ্য ও অভাবনীয় রণনৈপুণ্য এবং আল্লাহর মদদে জয় আসে। ’
জয়ের পর সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি সিজদাবনত হয়ে বাইতুল মুকাদ্দিসে প্রবেশ করেন। সিরিয়াতে নুরুদ্দিন জনকির জীবদ্দশায় তৈরি মেহরাব মসজিদুল আকসায় স্থাপন করেন। পুরো জেরুজালেমের খ্রিস্টান বসতিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে আদর্শ ও ঔদার্য তুলে ধরেন।
যুগ পরম্পরায় ইসলামের এই মহান সম্রাটকে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম নর-নারীরা অকুণ্ঠ মুগ্ধতা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। আল্লাহ সুলতানের কবরে শান্তির বারিধারা বর্ষণ করুন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
এমএমইউ/