‘নারীর হিজাব পরার পক্ষে দাঁড়ান’—এ আহ্বানকে সামনে রেখে ১লা ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী ‘হিজাব দিবস’ পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ বর্তমানে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নাজমা খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বপ্রথম হিজাব দিবস পালনের পক্ষে প্রচারণা চালান। এর ধারাবাহিকতায় পরে মুসলিম দেশগুলোতে এই দিবসটি পালনের প্রচলন শুরু হয়। শুরু হওয়ার পরপরই হিজাব দিবস বিশ্বজুড়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম বছরেই ৬৭টি দেশের মুসলিম নারীরা ছাড়াও খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও হিজাব দিবস পালন করেন। গত বছর ১৫০টি দেশে এ দিবস পালিত হয়েছিল।
অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও বিশ্ব হিজাব দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে নিউইয়র্কের সিটি হলের বারান্দায়। বাংলাদেশী, ভারতীয়, আফগান, তুরস্ক, সৌদি আরব, মিশর, কুয়েত, কাতার ও ইরানের নারীরা হিজাব দিবসের চেতনা ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেবেন।
হিজাব দিবসের আহ্বানকারী নাজমা খান ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম নারীরা ছাড়াও খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীরা হিজাব পরিধান করে দিবসটি পালন করেন। মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধানের সংস্কৃতি দেখে তারাও হিজাবের দৃষ্টিনন্দন সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। হিজাব পরিহিতা অমুসলিম নারীরা হিজাবের ব্যাপারে তাদের নিজ নিজ অনুভূতিও ব্যক্ত করেছিলেন।
বিশ্ব হিজাব দিবস অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে দ্য মুসলিম ওইমেন সোসাইটি (এমডব্লুএস) এবং মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন (এমএবি) দুইটি সংগঠন ‘অ্যাসেম্বলি ফর প্রটেকশন অব হিজাব’ নামে একটি ইভেন্টের আয়োজন করে ১৭ জানুয়ারি ২০০৪ সালে। এই সম্মেলনটি পরিচালনা করেন আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি। বাংলাদেশের এই ইভেন্টের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। অ্যাসেম্বলি ফর প্রটেকশন অব হিজাব বর্তমানে সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে।
এ দিক বিবেচনা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিজাব সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হিজাব মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিজাব মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৪ সালে। মেলার আয়োজক ছিলেন মার্সি মিশন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। মেলার আয়োজকেরা জানান, মেলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারী-পুরুষ সবাইকে শালীন পোশাক সম্পর্কে সচেতন করা ও ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো।
আরবি হিজাব শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ আবরণ বা অন্তরায়। আর শরিয়তের পরিভাষায় অশ্লীলতা ও ব্যাভিচার রোধকল্পে ইসলামী শরিয়ত নারীকে পরপুরুষ ও গায়রে মাহরাম ব্যক্তি থেকে নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য গোপন করার জন্য যে বিধিবদ্ধ নিয়ম পালনের আদেশ রয়েছে, তাতে নারী তার রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য গায়রে মাহরাম থেকে আড়ালে রাখা এবং তাদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা পরিহার করাই হলো হিজাব।
পর্দার তাৎপর্য ও গুরুত্ব বর্তমানে বিদ্যমান। আর হিজাব-পর্দার মাধ্যমে নারী জাতির ইজ্জত সংরক্ষণ সম্ভব। কেননা, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,‘হে নবী (সা.)! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়ে। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৯)
উপরোক্ত আয়াতে মুখের উপর নামিয়ে দেওয়া মানে এমন বড় চাদর দ্বারা আবৃত করা, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। বোরকার দ্বারা এ উদ্দেশ্য উত্তমরূপে পূরণ হয়। (তাফসিরে কুরতুবি)
আমেরিকার অন্যতম মানসিক রোগের চিকিৎসক ড. এডওয়ার্ড বগলার বলেন, প্রত্যেক মানুষের মনের আড়ালে আত্মা ধ্বংসকারী একটিউপাদান অতি সংগোপনে অবস্থান করছে। এর অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয়। অনেক সময় এর প্রভাবে মানুষ অজানা কারণে মানবিক অস্বস্তি ও অহেতুক নানা প্রকার শারিরীক ও মানসিক ব্যাধিতে ভুগে থাকেন। এই মারাত্মক উপাদানই স্নায়ুবিক বিকৃতি ও দুর্বলতার মূল কারণ। কুচিন্তা ও কুভাবনা এই উপাদানকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। খারাপ চিন্তা-ভাবনা পরিহারই এই ক্রিয়াকে কেবল নিষ্ক্রিয় ও দমন করতে পারে। বলা বাহুল্য যে, এমন আত্মঘাতী বিষক্রিয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য নারীকে পর্দার আড়ালে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।
প্রসঙ্গত ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে নারীদের কাছে হিজাব একটি চলমান ট্রেন্ড। কিন্তু পর্দা করা ছাড়াও হিজাবের রয়েছে নানা উপকারী দিক। বাইরের ধুলাবালি থেকে ত্বক ও চুলের সুরক্ষা দিতে এর তুলনা হয় না। আর সৌন্দর্যের ব্যাপার তো আছেই। তাই আজকাল পর্দা করার সঙ্গে সঙ্গে হিজাবের চাহিদা অনেক বেড়েছে।
লেখক, আলেম, প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
নির্বাহী পরিচালক, পানাহার ইবতেদায়ি মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এমএমইউ