ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদে নববীর খুতবা

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৯
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন মসজিদে নববীতে খুতবা দিচ্ছেন শায়খ ড. আলী আবদুর রহমান আল-হুজাইফি

আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর পছন্দনীয় কাজগুলো যথাযথ পালন করুন। সর্বপ্রকার মন্দকাজ থেকে বেঁচে থাকুন। এতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ হবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি পৃথিবী এবং পরকালে নিরাপদ জীবনের একমাত্র পাথেয়।

আল্লাহর রহমত বা করুণার কথা সবসময় স্মরণ করুন। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য নেয়ামত দিয়ে আমাদের সিক্ত রেখেছেন।

পবিত্র কোরআন ও রাসুল (স.)-এর সুন্নত মহান নেয়ামত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এ দুইটির কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্মানের সর্বোৎকৃষ্ট শিখরে অধিষ্ঠ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিরাশ হয়োনা এবং দুঃখ করোনা, যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী হবে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত :১৩৯)

তিনি আরো বলেন, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা ভালো কাজে নির্দেশ ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)

আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.) ও উম্মতকে তার স্তুতি ও প্রশংসা করতে বলেছেন। সৃষ্টি জীবের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দীনের ব্যাপারে কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত পথভ্রষ্টতা থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬)

ঈমান যেন প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে সুদৃঢ় হয়, তাই তিনি ঈমান বিনষ্টকারি শক্তি থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। প্রশান্ত, সুস্থ ও  প্রাণবন্ত হৃদয় আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় উপহার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না; তবে যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে, কেবল সেই পরিত্রাণ পাবে। ’ (সুরা শুআরা, আয়াত: ৮৮-৮৯)

বস্তুত, একজন খাটি মুসলমানের প্রকৃত মান-মর্যাদা শক্তি-সাহস তার ঈমানেই নিহিত আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শক্তি তো আল্লাহ তার রাসুল ও মুমিনদেরই, কিন্তু মুনাফিকরা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। ’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত: ০৮)

মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ উপেক্ষা করলে, তখন সে অপমান ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার স্বীকার হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তারাই লাঞ্ছিতদের দলভুক্ত। ’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত ২০)

আল্লাহর ওপর ভরসা করা দামী ও মূল্যবান ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকো, তবে আমার ওপর ভরসা কর। ’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ২৩)

ঈমান তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) জন্য পূর্ব শর্ত। ঈমানহীন তাওয়াক্কুল নিষ্ফলা। তা কোনো উপকারে আসে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছেই আছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের গোপন তথ্য, আর সকল কাজের প্রত্যাবর্তন তারই দিকে। অতএব, তারই ইবাদত কর এবং তারই ভরসা করা। ’ (সুরা হুদ, আয়াত ১২৩)

নিজেকে শক্তি-সামর্থহীন ভেবে মহান আল্লাহকে মনে করুন। যে এমন মনোভাব অন্তরে স্থান দিবে এবং আচার-আচরণে প্রতিফলন ঘটাবে, সে আল্লাহর কাছে প্রকৃত মুমিন ও সৎ হিসেবেই আল্লাহর কাছে পরিচিতি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার সহায় তো হলেন আল্লাহ, যিনি কিতাব অবর্তীণ করেছেন, আর তিনিই সৎকর্মশীল বান্দাদের সাহায্য করেন। ’ (সুরা আরাফ-১৯৬)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমার প্রতি বান্দার ধারণা মতোই আমি কাজ করি, সে যখনই আমাকে স্বরণ করে আমি তার সঙ্গেই থাকি। (বুখারি ও মুসলিম) 

তাই আমরা যখন আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ভরসা-বিশ্বাস স্থাপন করব, তিনি আমাদেরকে সফল ও সাহায্য করবেন। আর যে তার প্রতি বিশ্বাস ভরসা করবেনা, সে লাঞ্ছিত হবে।

যেকোন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার অনুমতি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বান্দার যেকোন কাজ পরিচালনা ও নির্বাহ সহজলভ্য করতে উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি চাইলে এসব মাধ্যমকে অকেজো করে দিতে পারেন।

তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রেও আল্লাহর সঙ্গে শিরকের আশঙ্কা রয়েছে। যেমন মানুষ বা উদ্ভিদকে কোনো কাজের মূল সম্পাদক মনে করা। কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিকে গুনাহ-মার্জনার অবলম্বন ধরে নেয়া, হাশরের ময়দানে সুপারিশ করা এবং সন্তান-সন্ততি দিতে পারে—এমন ধারণা পোষণ করা ইত্যাদি। সুপারিশ একমাত্র নবী করিম (সা.)-ই করতে পারবেন। তাও আল্লাহ তাআলার বিশেষ আদেশ ও অনুকম্পায়।

আল্লাহ তাআলা ব্যবসা-বাণিজ্যে ও টাকা-পয়সাকে মাধ্যম বানিয়েছেন। অপরদিকে তার করুণা ও অনুকম্পা ছাড়া শুধু উপায়-উপকরণের প্রতি ধাবিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চিয় আল্লাহ তাআলা নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:১৫৯)

আল্লাহ আমাদের প্রতিটি কাজ-কর্ম তার প্রতি বিশ্বাস-ভরসা রেখে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মদিনা মুনাওয়ারার পবিত্র মসজিদে নববীতে (১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪০ হিজরি মোতাবেক ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) প্রদত্ত জুমার খুতবাটির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ আতীকুল ইসলাম

অনুবাদক: তরুণ আলেম ও শিক্ষার্থী, অনার্স ২য় বর্ষ, আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলাম বিভাগে লিখতে পারেন আপনিও। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।