ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শোকানুষ্ঠানে হাদিস শোনালেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
শোকানুষ্ঠানে হাদিস শোনালেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের ওপর এক শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী সন্ত্রাসীর নারকীয় হামলায় নিহতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানালো নিউজিল্যান্ডবাসী। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বেতারে শুক্রবার (২২ মার্চ) জুমার আজান সম্প্রচারের পর দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

গত শুক্রবারের (১৫ মার্চ) ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। হত-বিহ্বল হয়েছে গোটা পৃথিবী।

শোকে মুহ্যমান হয়েছে মুসলিম বিশ্ব। আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড শুধু নিউজিল্যান্ডে নয়; পৃথিবীতেই নজিরবিহীন।

মর্মন্তুদ এই নৃশংসতার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের দরদী ও বিমর্ষ চেহারা দেখেছে বিশ্ববাসী। একদিকে হতাহতদের শোকার্ত পরিবারকে তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিমসহ অভিবাসীদের আশ্বাস ও অভয় দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের শোকের সঙ্গী হয়তো হতে পারবো না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, আমরা একসঙ্গেই চলবো। ’

হিজাব পরে শোকানুষ্ঠানে সমবেত কিউই নারীদের একাংশ।  ছবি: সংগৃহীত

নিহত মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানাতে প্রথম থেকেই পোশাক-পরিচ্ছদে নিজেকে অনন্য প্রমাণ করেছেন জেসিন্ডা। নিজেদের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে হিজাব পরে তিনি মুসলিম কমিউনিটিতে হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) তিনি নিহতদের স্মরণে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আরবিতে ‘আসসালামু আলাইকুম (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)’ বলে তার বক্তব্য শুরু করেন।

কেবল তা-ই নয়, আমন্ত্রিত মুসলিমদের জন্য সংসদে নামাজের ব্যবস্থাও করে দেন জেসিন্ডা। এরপর অন্য ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনা করেন। তারপর তিনি উঠে গিয়ে সংসদে আসা মুসলিমদের সমবেদনা জানান। মুসলিম নারীদের বুকে টেনে নেন তিনি।

আন-নুর মসজিদের প্রাঙ্গনে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার (২২ মার্চ) ১টা ৩২ মিনিটে হামলার শিকার আল-নূর মসজিদের পাশে হেগলি পার্কে নীরবতার কর্মসূচিতে অংশ নেন জেসিন্ডা। মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিসহ শত শত কিউই নারী হিজাব পরে শোকানুষ্ঠানে হাজির হন। আসেন হাজারো নিউজিল্যান্ডার।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে আজান প্রচার হয়। এরপরই দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আন-নুর মসজিদের প্রাঙ্গনে জুমার নামাজে শত শত মুসল্লি।  ছবি: সংগৃহীত

তার আগে শোকার্ত জনতাকে হাদিস শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরা (মুমিন) সবাই একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে, পুরো শরীর ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। ’

এরপর তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডবাসী আপনাদের মতোই শোকাহত। আমরা ঐক্যবদ্ধ। ’

অনুষ্ঠানে আল-নুর মসজিদের ইমাম জামাল ফৌদা বলেন, ‘বন্দুকধারী বিশ্বের লাখো কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙেছে। আজ সেই একই জায়গায় আমি দেখছি ভালোবাসা ও সহানুভূতি। ’ 

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডবাসী ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের হৃদয় হয়তো ভেঙেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি একসঙ্গে। আমাদের বিভাজিত করার সুযোগ কাউকে আমরা দেবো না বলে, এ ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ’

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে কোরআন তেলাওয়াতে সংসদ অধিবেশন শুরু 
আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা যেমন আছে

এর আগে দেশের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা জানান, হামলায় যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেরকমসহ সব সামরিক স্টাইলের আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ হবে নিউজিল্যান্ড।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আল-নূরের মতো শুক্রবার নিউজিল্যান্ডে অনেক মসজিদ খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। মসজিদের বাইরে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন করবেন স্থানীয়রা। হামলায় নিহতদের মরদেহও আজ মেমোরিয়াল পার্ক সিমেট্রিতে একসঙ্গে দাফনের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
এমএমইউ/এইচএ/

** আজান প্রচারের পর দুই মিনিট নীরবতা, হিজাবে হাজির নারীরা
** নিউজিল্যান্ডের পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতাজুড়ে ‘সালাম’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।