ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

২১ এপ্রিলেই শবে বরাত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
২১ এপ্রিলেই শবে বরাত

ঢাকা: শাবান মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে আলোচনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত আগামী ২১ এপ্রিল দিনগত রাতেই লায়লাতুল বরাত বা শবে বরাত পালনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।
 

চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আলেম-ওলামাদের নিয়ে গঠিত ১১ সদস্যের উপ-কমিটির সুপারিশে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

গত ১৩ এপ্রিল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে ওই উপ-কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন বিশিষ্ট আলেম এবং মারকাযুদ দাওয়া আল ইসলামিয়ার শিক্ষা সচিব মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মালেক। সেই উপ-কমিটি সকালে বৈঠক করে সুপারিশমালা তৈরি করে এবং তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
 
কমিটির প্রধানকে পাশে রেখে সুপারিশমালা প্রকাশকালে প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ জানান, ২১ এপ্রিল (রোববার) দিনগত রাতেই শবে বরাত পালনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।
 
এর আগে, গত ৬ এপ্রিল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি সভা করে জানিয়েছিলো, ওই দিন দেশের আকাশে কোথাও শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ৮ এপ্রিল থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হবে এবং ২১ এপ্রিল দিনগত রাতে পবিত্র লায়লাতুল বরাত পালিত হবে।
 
তবে ‘মজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ নামে একটি সংগঠন দাবি করে বসে, সেদিন খাগড়াছড়িতে চাঁদ দেখা গেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, ২০ এপ্রিল দিনগত রাতে শবে বরাত পালিত হওয়ার কথা। এ নিয়ে বিতর্ক এড়াতে জরুরি বৈঠক ডাকে সরকার, গঠন করে উপ-কমিটি। শেষ পর্যন্ত এই উপ-কমিটি আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখার সুপারিশ করলো সরকারকে।
 
লিখিত সুপারিশ সাংবাদিকদের পড়ে শোনান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে উপ-কমিটির সদস্যরা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন দিক নিয়ে শরীয়তের আলোকে পর্যালোচনা করেন। উপ-কমিটি আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দু’জন কর্মকর্তাকে পাঠান, যারা চাঁদ দেখেছেন মর্মে দাবি করেছেন তাদের সাক্ষ্য দিতে আনার জন্য। কিন্তু তাদের আহ্বানে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না এসে অপ্রাসঙ্গিক কিছু শর্ত জুড়ে দেন। বিষয়টি উপ-কমিটিকে অবহিত করা হলে সভার সদস্যরা ওই শর্তগুলো শরীয়তের সাক্ষ্য প্রদানের নিয়মবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে শরীয়া নিয়ম অনুযায়ী কমিটির সদস্য সচিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমানকে পাঠান। কিন্তু এরপরও তারা সাক্ষ্য দিতে আসেননি এবং আগের মতো অপ্রাসঙ্গিক শর্ত জুড়ে দেন।  
সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।  ছবি: বাংলানিউজলিখিত সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু সাক্ষীরা উপ-কমিটির বারবার অনুরোধের পরও সাক্ষ্য দিতে সভায় উপস্থিত হননি, বরং সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এমন কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণের কোনো ভিত্তি নেই শরীয়তে। তাই চাঁদ দেখার কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য না পাওয়ায় ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির গত ৬ এপ্রিল ঘোষিত সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। অর্থাৎ ৮ এপ্রিল থেকে শাবান মাস শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। সেই মোতাবেক ২১ এপ্রিল দিনগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।
 
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শরীয়া মোতাবেক আমাদের যে উপ-কমিটি গঠিত হয়েছিল সর্ব সম্মতিক্রমে তারা এই ঘোষণাটি পেশ করেছেন।
 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি (সিদ্ধান্ত) পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক এবং অরাজনৈতিক।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা (চাঁদ দেখা দাবিকারীরা) কারা আমরা জীবনেও শুনিনি। তারা হাইকোর্ট পর্যন্ত গেছে। হাইকোর্ট পরিষ্কার বলেছেন- এটা অত্যন্ত পবিত্র, ইসলামের বিষয়। এটা নিয়ে যুক্তি-তর্কে না গিয়ে তারা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটিই ফাইনাল হওয়া উচিত ও ফাইনাল হবে। তারা (চাঁদ দেখা দাবিকারীরা) যদি সুন্দর কোনো সিদ্ধান্ত চাইতেন, তাহলে তারা উপস্থিত হতেন এবং কথাবার্তা বলতেন।
 
শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, আলেম-ওলামারা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এর মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই, কোনো দলাদলি নেই, কোনো হিংসা-বিদ্বেষ নেই; এর মধ্যে আছে একমাত্র শরীয়তের বিধান, তারা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আমরা একবাক্যে মেনে নিয়ে ২১ তারিখ বরাত পালন করি।
 
এসময় ধর্মসচিব মো. আনিছুর রহমান ছাড়াও মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
এমআইএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।