‘ঈদ’ শব্দের আরবি শব্দমূল ‘আউদ’। ঈদ অর্থ যা ফিরে ফিরে আসে।
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দোৎসব ও ইবাদত। এ আনন্দ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এ আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এ আনন্দে কোনো অশ্লীলতা ও পাপ-পঙ্কিলতা নেই। এ আনন্দে কেবলই সওয়াব ও পুণ্যের দ্যূতি। এ আলোক-দ্যূতি ও আনন্দ ক্রমান্বয়ে সঞ্চারিত হয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে। শিশু-কিশোর ও আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা—সবার দেহ-মানসে লাগে ঈদ-আনন্দের ছোঁয়া।
আমাদের সামান্য সহযোগিতা এবং কিছু টাকা, কিছু নতুন কাপড় পেয়ে হতদরিদ্র, এতিম-দুস্থ, নিঃস্ব-অসহায় ও বেশুমার ছিন্নমূল মানুষের মুখে ফোটে হাসির রেখা। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরাও এ আনন্দে মেতে ওঠেন সমান রূপে। ঈদ উপলক্ষে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তারাও ভোগ করেন। আর এভাবেই ঈদ সর্বজনীন ও সবার হয়ে ওঠে।
সুখবর পেলেই মানুষ আনন্দিত হয়। এক মাস রোজার সাধনার পর ঈদের পবিত্র এই দিনে পুরস্কার হিসেবে ক্ষমা প্রাপ্তিই সেই আনন্দের কারণ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন ফেরেশতাদের মধ্যে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘হে ফেরেশতারা, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হতে পারে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘হে প্রভু পুণ্যরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান। ’ আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোজা) পালন করেছে। অতঃপর দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। সুতরাং আমার মর্যাদা, সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম! আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদের মাফ করে দেব। ’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৩)
ইসলাম বিনোদনকে সমর্থন করে। সুস্থ বিনোদনের কখনো বিরোধিতা করে না। কিন্তু অশ্লীলতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের উৎসবে ঢোল-তবলা ও গান-বাজনা নেই। বিনোদনের নামে অসামাজিকতা ও নগ্নতা নেই।
ইসলামে নারী-পুরুষের একসঙ্গে অবাধ বিচরণ নিষিদ্ধ। মুমিনের ঈদ-আনন্দ উত্তম পোশাক গায়ে দেওয়া, ঈদের দিন মিষ্টিমুখ করা, সদকাতুল ফিতর আদায়, গরিব-দুস্থ ও অসহায়ের সহযোগিতা-সেবা, অন্যের মুখে হাসি ফোটানো এবং ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আনন্দ-উৎসবের সঙ্গে মানুষের অভিরুচি ও চাহিদার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের উৎসব ও আমাদের উৎসবের মধ্যে পার্থক্য বৃহদাকারের। মুসলমানদের আনন্দ-উৎসব অপসংস্কৃতি ও প্রথাজনিত কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। উৎসব বরণের নামে অনাচার, পাপাচার, অসামাজিক কার্যকলাপ ও নৈতিকতাবিবর্জিত-বল্গাহীন কাজকর্ম ও অযথা আড়ম্বরতা ইসলাম সমর্থন করে না।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আবার বৈধ ও নির্দোষ আনন্দ-ফুর্তি, শরীরচর্চামূলক খেলাধুলা, নৈতিক মূল্যবোধ ও ঈমানি ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ শিল্প-সংগীত এগুলোও ঈদের দিনের বৈধ আনুষ্ঠানিকতার বাইরে নয়। ইসলাম এগুলোকে পূর্ণ সমর্থন করে।
আয়েশা (রা.) বলেন, ঈদের দিন হাবশিরা খেলা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্রীড়ারত হাবশিদের উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, ‘ছেলেরা, খেলে যাও! ইহুদিরা জানুক যে আমাদের ধর্মে প্রশস্ততা-উদারতা আছে। আমাকে প্রশস্ত দ্বীনে হানিফসহ প্রেরণ করা হয়েছে। ’ (বুখারি: ১/১৭৩, মুসলিম: ২/৬০৮)
রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন:bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘন্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এমএমইউ