সাধারণত সারা বছরই মসজিদটি ঘিরে মুসল্লিদের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আনাগোনা থাকে। আর এই ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন গুঠিয়ার গ্রামীন পরিবেশে অবস্থিত বায়তুল আমান জামে মসজিদে।
বরিশাল নগরের নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাস বা যাত্রীবাহি থ্রি-হুইলার(মাহিন্দ্রা)-এ চরে আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছানো যায় মসজিদটিতে। বরিশাল-বানারীপাড়া আঞ্চলিক মহাড়কের পাশে হওয়ায় বাস বা থ্রি-হুইলার থেকে নামতেই মসজিদের দেখা মিলবে। তবে ঘুরতে গেলে বিকেল বেলাতে যাওয়াই উত্তম। কারণ দিনের বেলায় মসজিদ যতোটা না তার নিজস্ব রুপ ফুটিয়ে তুলবে, রাতের বেলা তার দ্বিগুন সৌন্দয্য লক্ষ করা যাবে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি শবে-বরাত শবে-মেরাজসহ সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন। দেশের অন্যতম সেরা স্থাপত্যশৈলীর নয়নাভিরাম স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২ লাখ ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের কাজের মধ্য দিয়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হয়।
১৪ একর জমির উপর নির্মিত মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের ডান পাশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে পানিতে মসজিদটির পুরো প্রতিবিম্ব দেখা যায়। পুকুরটির চারপাশ নানান রঙের ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। পুকুরে রয়েছে মোজাইক দিয়ে তৈরি শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটের ঠিক উল্টোদিকে মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে দু’টি ফোয়ারা। আর পুকুরের পশ্চিমদিকে মূল মসজিদের অবস্থান। মসজিদের লাগায়ো উত্তর দিকে রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার মায়ের নামে মরহুমা মালেকা বেগম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমাখানা। পুরো কমপ্লেক্সের তিনদিকে রয়েছে সু-বিশাল লেক যা কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা বেষ্টনির কাজও করে থাকে। মসজিদটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আড়াই একর জায়গায় রয়েছে কবরস্থান। আর উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে গাড়ি পার্কিং ও নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা ওযুখানা ও টয়লেট। মসজিদের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে রয়েছে একটি হেলিপ্যাডও, তবে পুরো কমপ্লেক্সের আঙিনাজুড়ে থাকা ফল ও ফুল গাছের বাগান মুসল্লিসহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
মূল মসজিদের দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। আর পুরো মসজিদ জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় ৯টি গম্বুজ। মসজিদ ভবনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে আয়াতুল কুরসি, সুরা আর রহমানসহ আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সুরা। মসজিদ ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিল কাচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে করা হয়েছে নকশার কাজ। মসজিদের দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি ছাড়াও রয়েছে বাহারি নকশার আলোকবাতির ব্যবস্থা। এছাড়া বাহিরে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স ঘিরেও রয়েছে বাহারি আলোকবাতি। যা রাতের বেলা মসজিদের শোভা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় লাইনের পাশাপাশি রয়েছে ১৫০/১৫ কেভিএ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব দু’টি জেনারেটর।
মসজিদের নকশায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মসজিদের নকশাকে অনুকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের স্তম্ভটি বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজমের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদটি শুধু দেখতেই নয় এর ভেতরে এতো ‘আধুনিক শব্দের’ ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা নামাজের স্থান।
মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে মুসল্লিরা। পাশাপাশি বরিশালের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের একটি এই কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়। দিনে দিনে যেমন মুসল্লি বাড়ছে তেমনি মসজিদের শৈল্পিকতা ও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশ দেখতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এমএস/এমএমইউ