কিন্তু আমি জানি না, এমন অর্থের পরিমাণ কত হবে। আমার অর্থের সঙ্গে সেগুলো মিশেও গেছে।
উত্তর: এক. যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ নিয়েছে, তার ওপর আবশ্যকীয় হচ্ছে—সে সম্পদ ওই ব্যক্তির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া তার তওবা কবুল হবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন সেদিন আসার আগে আজই তার থেকে মাফ করিয়ে নেয়, যেদিন তার কোনো দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) থাকবে না। যদি তার সৎকর্ম থাকে, তাহলে তার সৎকর্ম থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে রাখা হবে। আর তার সৎকর্ম না থাকলে, তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে জুলুমের সমপরিমাণ নিয়ে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ২৪৪৯)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘আলেমরা বলেন, প্রত্যেক গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহটি বান্দার মাঝে ও আল্লাহ্র মাঝে হয়ে থাকে; কোনো মানুষের হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত তিনটি: ১. গুনাহ ত্যাগ করা। ২. কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩. সে গুনাহে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোনো একটিও পাওয়া না যায় তাহলে তওবা শুদ্ধ হবে না।
আর যদি গুনাহটি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত চারটি: উল্লেখিত তিনটি এবং পাওনাদারের হক থেকে নিজেকে মুক্ত করা; যদি সম্পদ বা এ জাতীয় কিছু হয় তাহলে সেটা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া। আর যদি অপবাদ ও এ ধরনের কিছু হয় তাহলে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নিজেকে তার কাছে পেশ করা কিংবা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। আর যদি গিবত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া। ’ (রিয়াদুস সালেহিন, পৃষ্ঠা: ৩৩)
অন্যায়ভাবে কোনো সম্পদ নিয়ে থাকলে এবং সম্পদের পরিমাণ জানা না থাকলে তাহলে সতর্কতা রক্ষা করে প্রবল ধারণাকে আমলে নিবেন। যদি অর্থের পরিমাণ ১০০-৮০ মাঝে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে আপনি ১০০ টাকা ধরবেন; যাতে করে নিশ্চিতভাবে আপনার জিম্মাদারি মুক্ত হয়।
যদি পাওনাদারকে জানালে বিপত্তি ঘটার আশংকা থাকে, তাহলে তাকে জানানো আবশ্যকীয় নয়। বরং সম্ভাব্য যেকোনো মাধ্যমে অর্থটা তার কাছে পৌঁছালেই যথেষ্ট। যেমন—তার একাউন্টে জমা করে দেওয়া কিংবা এমন কাউকে দেওয়া, যিনি তাকে না জানিয়ে তার কাছে অর্থটা পৌঁছে দেবেন। আর যদি পাওনাদার মারা যায়, সেক্ষেত্রে পাওনাদারের ওয়ারিশদের কাছে পরিশোধ করে দিতে হবে।
দুই. আর যদি আপনি চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করার পরেও পাওনাদারকে চিনতে ও অর্থটা তার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম না হন; তার নাম ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অন্য যে কোন কারণে সেক্ষেত্রে আপনি উক্ত অর্থ তার পক্ষ থেকে দান করে দেবেন। তবে শর্ত হল—যখনই আপনি তার কাছে পৌঁছতে সক্ষম হবেন, তখনই আপনি তাকে দুটো অপশন দেবেন: এ সদকাকে মেনে নেওয়া কিংবা নিজে পুনরায় অর্থটা গ্রহণ করা। যদি মালিক সদকার বিষয়টি মেনে যায় তাহলে ভাল। আর যদি সদকা করাটা মেনে না যায় এবং অর্থ দাবী করে তাহলে তাকে তার অর্থ ফেরত দিতে হবে। আর পূর্বের সদকাকৃত অর্থ নিজের ব্যক্তিগত সদকা হিসেবে গণ্য হবে। পাশাপাশি কর্তব্য হল: আল্লাহ্র কাছে ইস্তিগফার করা, তওবা করা এবং এ অর্থের মালিকের জন্য দোয়া করা। ’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৬৫)
মোদ্দাকথা, এ ধরনের খারাপকাজ থেকে থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য। কেননা হতে পারে কোনো ব্যক্তি নির্বুদ্ধিতা ও লোভাতুর বোকামির কারণে চুরি করে ফেলল; তেমন কিছু মনে করল না। কিন্তু আল্লাহ যখন তাকে হেদায়েত দেন, তখন সে এ গুনাহ থেকে মুক্ত হতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৬২)
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২২১১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
এমএমইউ