জানা যায়, দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে ২০১৫ সালে এ ঈদগাহের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের প্রায় দেড় বছরে এটি নামাজের জন্য পুরো প্রস্তুত করা হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ ঈদগাহ মিনারটি। প্রত্যেকটি গম্বুজে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি সংযোগ। মিনার দু’টির উচ্চতা ৫০ ফিট, যে মেহেরাবে খতিব বয়ান করবেন সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দু’টির উচ্চতা ৩০ ফুট। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ প্রস্তুতি কাজ চলছে পুরোদমে। যেখানে খাল রয়েছে, সেই জায়গাগুলো মাটি দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। নামাজ আদায়ের জন্য মাঠ তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। গোটা মাঠ যেন সবুজের ঘাসের আস্তরণের পরিণত হয়েছে। মাঠে নামাজের দাঁড়ানোর জন্য চুন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে লম্বা-লম্বা লাইন। এরই মধ্যে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে চারটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার। মাঠের আরেকটি অংশে ঘের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের গ্যারেজ। এছাড়াও পাশ্ববর্তী স্টেশন ক্লাব, সার্কিট হাউজ, শিশু একাডেমি ও জেলা গণগ্রন্থাগারেও যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, উপমহাদেশে এত বড় মিনার সম্বলিত ঈদগাহ মাঠ আর একটি নেই। এবছর প্রায় সাত লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে যা শোলাকিয়ার চেয়ে অনেক বড়। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজে দেশের সর্ববৃহৎ ছয় লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে এ মাঠে নামাজ আদায় করেছেন। এবার ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ে এ ঈদগাহ মাঠে লোক সমাগম অনেক বেশি হবে যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ৫২ গম্বুজের এ ঈদগাহ মাঠে এবছর ঈদুল আজহার জামাতে এক সঙ্গে সাত লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করবেন।
ঈদগাহটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতিবছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। দিনাজপুরবাসী আশা করছে, এবার থেকে ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এই বড় ঈদ জামাতের উদ্যোগ নিয়েছেন।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব শামসুল ইসলাম কাশেমী। ঈদুল আজহার জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসন ও দিনাজপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও যদি বৈরী আবহাওয়া হয় তাহলে বড় মাঠের পাশে মসজিদসহ আশপাশের এলাকার মসজিদগুলোতে একযোগে নামাজ আদায় করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ আবু সায়েম বাংলানিউজকে বলেন, সাত লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের জামাতকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ঈদগাহের চারপাশে মেটেল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির পর জামাতে প্রবেশ করানো হবে। ঈদগাহ প্রাঙ্গণে সক্রিয় থাকবে সাদা পোশাকে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরাও। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত হয়েছে চারটি বড় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
এসআরএস