পারিবারিক পরিমণ্ডলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা গমন করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সে সময় বাংলা-আসামে বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসা স্থাপনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কলকাতা থাকাকালীন মাওলানা জৈনপুরীর আদর্শে ইসলাম প্রচার, স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের আদর্শে মুসলিম জাগরণ, নওয়াব আব্দুল লতিফের আদর্শে শিক্ষা বিস্তার ও জামাল উদ্দিন আফগানির ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধে প্রভাবিত হন।
মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সূত্রে সোলতান (১৯০১), হাবলুল মতিন (১৯১২), মুহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনূর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) ও আল-এসলাম (১৯১৩) পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় লেখালেখি করতেন। সে সময় মিসর থেকে প্রকাশিত আল মিনার, আল-আহরাম, আল-বিলাদেও তার লেখা প্রকাশিত হয়। ফারসি দৈনিক পত্রিকা হাবলুল মতিনের বাংলা সংস্করণ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম থেকে মাসিক ইসলামাবাদ নামেও একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে নিয়ে কলকাতা থেকে সাপ্তাহিক সোলতান পত্রিকা প্রকাশ করেন।
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইসলামাবাদী ও অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় আঞ্জুমানে উলামায়ে বাংলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি ছিলেন এর যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর বঙ্গীয় প্রাদেশিক শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম কনফারেন্সের আয়োজন করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘মুসলিম সাহিত্য সমিতি’ প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মাওলানা রাজনৈতিকভাবে প্রথম দিকে কংগ্রেসে সম্পৃক্ত থাকলেও ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। ইসলামাবাদী ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের অন্যতম স্থপতি।
১৯২৯ সালে মাদরাসা ছাত্রদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত আসাম-বেঙ্গল জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সম্পাদক ছিলেন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কৃষক প্রজা পার্টির মনোনয়নে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য মাওলানা ইসলামাবাদী মহাত্মা গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে দিল্লির লাল কেল্লায় বন্দি ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি আবারও আটক হন।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন, যা পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জনাব আহমদ হোসাইনের একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেন, ‘স্বজাতির কল্যাণ কামনার চেতনা ও স্বজাত্যবোধের ক্ষেত্রে তিনি মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। এই অনুপ্রেরণাই তাঁকে ভাষা আন্দোলন পরিচালনা ও বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করেছে। ’ (মুকুল চৌধুরী সম্পাদিত, অগ্রপথিক সংকলন ভাষা আন্দোলন, পৃষ্ঠা ৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল ১৯৯৩)
চট্টগ্রামের দক্ষিণ মহকুমার কর্ণফুলীর তীরবর্তী দেয়াং পাহাড়ে জাতীয় আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল তার আজীবন। ১৯১৫ সালে তিনি সেই লক্ষ্যে সরকার থেকে ৬০০ বিঘা জমি ও ওই এলাকার জমিদার আলী খান থেকে ৫০০ কানি ভূমি রেজিস্ট্রি মূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গ্রহণ করেছিলেন। মুসলিম রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা শওকত আলী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। দেয়াং পাহাড়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই স্থান পরিদর্শনে এসে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা আকরম খাঁ, মুন্সী রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
মাওলানা ইসলামাবাদী ৪২টির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলোর মধ্যে ১. ভারতে মুসলিম সভ্যতা, ২. সমাজ সংস্কার, ৩. ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমান, ৪. ইসলাম জগতের অভ্যুত্থান, ৫. ভারতে ইসলাম প্রচার, ৬. সুদ সমস্যা, ৭. ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান (৩ খণ্ডে), ৮. ইসলামী শিক্ষা, ৯. কোরআন ও বিজ্ঞান, ১০. আত্মজীবনী ইত্যাদি উল্লেযোগ্য।
তিনি ১৯৫০ সালের ২৪ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
ইসলাম বিভাগে লিখতে পারেন আপনিও। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এমএমইউ